কাজ শেষের নির্ধারিত সময়সীমার পরে দু’বছর পেরিয়ে গিয়েছে। মেদিনীপুরে কংসাবতীর অ্যানিকেত বাঁধের কাজ সম্প্রতি শেষ হলেও গেটের কাজ বাকি। অথচ ২০১৪ সালে বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। সেচ দফতরের অবশ্য দাবি, শীঘ্রই সেচের জলের সমস্যা মিটবে।
মেদিনীপুর শহর লাগোয়া কাঁসাইয়ের অ্যানিকেত বাঁধে প্রথম ভাঙন ধরে ২০০৭ সালে। তারপরে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার হলেও বন্যার জলের তোড়ে তা ফের ভেঙে যায়। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর তৎকালীন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আধুনিক বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগী হন। ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০৪ কোটি টাকা। বাঁধ নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৪-তে। সেচ দফতর জানিয়েছে, যে সংস্থা থেকে বাঁধ তৈরির কিছু সরঞ্জাম কেনার কথা ছিল সেই সংস্থাটি মাঝে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। ফলে কাজ থমকে যায়। এ বার যাবতীয় ‘সিভিল ওয়ার্ক’ শেষ। ‘মেকানিক্যাল ওয়ার্ক’ কিছু বাকি রয়েছে। সেচ দফতরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অনীশ ঘোষ বলেন, “শিগগিরি আমরা খাল দিয়ে সেচের জল দিতে পারব। চাষিদের এটুকু আশ্বস্ত করতে পারি।”
সেচ দফতর জানিয়েছে, আগে এই বাঁধ থেকে ৮৭ হাজার একর জমিতে সেচের জল দেওয়া হত। উপকৃত চাষির সংখ্যা ২ লক্ষ ৬৫ হাজার। গ্রীষ্মকালে যখন মাঠ কাঠফাটা, পুকুর শুকিয়ে গিয়েছে, জলস্তর নেমে যাওয়ায় নলকূপে জল উঠছে না, তখন সেচের জন্য একমাত্র ভরসা ছিল এই বাঁধের জল। খড়্গপুর-১ ব্লকের লছমাপুরের বাসিন্দা প্রবাল হালদারের কথায়, “এই সেচের উপর ভরসা করেই সব্জি ও তিল চাষ করতাম। কিন্তু পরপর কয়েক বছর জল না মেলায় গ্রীষ্মে চাষ হত না বললেই চলে। গভীর নলকূপ থেকে সেচ দিতে গেলেও খরচ যে অনেক বেশি।”
খুশি। দীর্ঘদিন জল না থাকায় খড়্গপুর-১ ও ডেবরা ব্লকের কিছু জায়গায় খালে বেআইনি দখলদারের সংখ্যাও বেড়েছে। বেআইনি দখলদারদের না সরাতে পারলে ভবিষ্যতে খালের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন। সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “বেআইনি দখলদারদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা নিজেরাই সরে যাওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। আশা করি, সমস্যা মিটে যাবে।”
সেচের পাশাপাশি পানীয় জলের জোগানও বাড়ানো যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। আগে মেদিনীপুরে জল সরবরাহের জন্য সব সময় পর্যাপ্ত জল তোলা পাওয়া যেত না। এ বার সেই সমস্যা মিটবে বলেই আশা। মেদিনীপুর পুরসভার পুর পারিষদ (জল) মৌ রায়ের কথায়, “আরও কিছুদিন দেরি হলে তো আমাদের জলের জন্য অন্য উৎস খুঁজতে হত। অ্যানিকেতের কাজ শেষ হতে চলেছে। এ বার হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।”
সেচ দফতর জানিয়েছে, বাঁধ থেকে রেল সেতু পর্যন্ত প্রায় ২৩৩ একর জায়গায় নদীতে গড়ে ৬ ফুট গভীরতা পর্যন্ত জল থাকবে। বর্ষায় বাঁধ বেয়ে জল বেরিয়ে যাবে। গ্রীষ্মকালে বাঁধে গেট বন্ধ করে ১৪০০ একর ফুট জল সঞ্চয় করে রাখা যাবে। যা দিয়ে মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহর, শিল্পাঞ্চল, আইআইটি-র জন্য পানীয় জলের সংস্থান করতে সুবিধা হবে। পাশাপাশি গ্রীষ্মকালে সেচের জলও দেওয়া যাবে বলে সেচ দফতর জানিয়েছে।