শৌখিন, সস্তা ছাতা কাজ কেড়েছে কালিপদ, সুবলের

বর্ষা এলেও বর্ষাতি বা ছাতা সারানোর সেই রেওয়াজ এখন অতীত। বাজারে সস্তা রেডিমেড বর্ষাতি বা রং-বেরঙের ছাতা এখন ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ। পুরনো ছাতা সারানোর বদলে নতুন সস্তা ছাতায় বাজার ছেয়ে যাওয়ায় সেদিকেও ঝুঁকেছে ক্রেতা।

Advertisement

গোপাল পাত্র

পটাশপুর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৯ ০০:৫০
Share:

পটাশপুর বাসস্ট্যান্ডে ছাতা সারাচ্ছেন কালিপদ। নিজস্ব চিত্র

সারা বছর টুকটাক কাজ করলেও এক সময় বর্ষা শুরুর এক মাস আগে থেকে আর দম ফেলার ফুরসত থাকত না ওদের। কারণ বর্ষার বৃষ্টি থেকে মাথা বাঁচাতে কুলুঙ্গি থেকে পুরনো ছাতা বের করে সেটাকে তৈরি করে রাখাটাই ছিল গৃহস্থের দস্তুর। তাই প্রতি বছর বর্ষা নামার আগে ছাতা সারানোর তাগিদে কাজের শেষ থাকত না কালিপদ দাস, সুবল দেবনাথ, আশিস ঘোড়ইদের।

Advertisement

বর্ষা এলেও বর্ষাতি বা ছাতা সারানোর সেই রেওয়াজ এখন অতীত। বাজারে সস্তা রেডিমেড বর্ষাতি বা রং-বেরঙের ছাতা এখন ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ। পুরনো ছাতা সারানোর বদলে নতুন সস্তা ছাতায় বাজার ছেয়ে যাওয়ায় সেদিকেও ঝুঁকেছে ক্রেতা। ফলে সুদিন গিয়েছে কালিপদ, সুবল, আশিসের মতো ছাতা সারাইওয়ালাদের। পেটের ভাত জোগাতে বাপ-ঠাকুরদার পেশা ছেড়ে এঁদের বেশিরভাগই এখন বিকল্প কাজের খোঁজে।

ছোটবেলা থেকে মূক ও বধির। বয়স এখন ষাট পেরিয়ে গিয়েছে। ইশারা দিয়েই ক্রেতাদের সঙ্গে চলে কাজের দর কষাকষি। আগের মতো কাজ না থাকলেও এবং সংসারে অভাবের থাবা চেপে বসলেও পূর্ব পুরুষের পেশাকে আঁকড়ে ছিলেন কালিপদ। বর্ষাতি, ছাতা সারাইয়ের কাজ করেই তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখন আর দিন চলে না। পেট চালাতে বিকল্প রোজগারের পথে বাধ্য হয়েই হাঁটতে হয়েছে। ‘‘ছাতা সারানোর কাজ না জুটলে জুতো সেলাই করি।’’ ইশারায় জানালেন কালিপদ। জানালেন, আগে বর্ষা আসতে না আসতেই বর্ষাতি, ছাতা সারানোর জন্য দলে দলে কারিগরেরা সাইকেলে করে আসত। সে সব দিন আর নেই। পুরনো, ভাঙা ছাতা সারানোর চল প্রায় উঠে যেতে বসেছে। কারণ বাজারে সস্তা রেডিমেড বর্ষাতি আর ছাতার ছড়াছড়ি। সস্তা এবং শৌখিনতার জন্য মানুষজনও সেদিকে ঝুঁকেছে। পুরনো বর্ষাতি বা ছাতা সারাতে কমপক্ষে ৩০-৪০ টাকা খরচ হয়। তার উপর আবার ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। সেই জায়গায় বাজারে নতুন রং-বেরঙের শৌখিন বর্ষাতি, ছাতা ৭০ থেকে ৮০ টাকায় সহজেই মেলে।

Advertisement

পটাশপুর-১ ব্লকের কাটরঙ্কা গ্রামের কালিপদকে ইশারায় জানলাম এখন বাজার কেমন। ঘাড় নেড়ে কালিপদ জানান, ভাল নয়। আগে প্রতিদিন যেখানে কুড়ি থেকে তিরিশটা বর্ষাতির সারানোর বরাত আসত। সেখানে মাত্র পাঁচ থেকে সাতটার সারানো হচ্ছে। তা ছাড়া কোনও সরকারি সাহায্যও কাজের অভাবে তাই অন্য কাজের খোঁজে পটাশপুরের অমরপুর, অমর্ষি, গোকুলপুর, কাটরঙ্কা-সহ একাধিক গ্রামের ছাতার কারিগরেরা।

এবিষয়ে পটাশপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নমিতা বেরা বলেন, ‘‘কর্ম সঙ্কটে পড়া ওই পেশার মানুষদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করতে সরকারি ভাবে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বয়স্কদের বিভিন্ন সরকারি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement