সৈকতে পসরা সাজিয়ে হকার।
মাস পেরোলেই শুরু হয়ে যাবে পর্যটনের মরসুম। কিন্তু তার আগেই সৈকত শহর দিঘায় হকার উচ্ছেদের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে অশান্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সৈকত শহরের সি বিচ কিংবা রাস্তাঘাটে পসরা পেতে ব্যবসা করা যাবে না বলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন যে নির্দেশ জারি করেছিল, মঙ্গলবারই শেষ হয়েছে তার চূড়ান্ত সময়সীমা। আজ, বুধবার থেকে সৈকত শহরে হকার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে হকারদের প্রশাসনিকভাবে সরিয়ে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। গত সপ্তাহ থেকে লাগাতার দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের অফিসে স্মারকলিপি দেওয়ার পাশাপাশি সোমবার কাঁথির মহকুমা শাসক শুভময় ভট্টাচার্যের কাছেও স্মারকলিপি দেন বিজেপি নেতৃত্ব। শুধু তাই নয়, হকার উচ্ছেদ করতে গেলে দিঘায় ‘প্রতিরোধ’ গড়ে তোলার পাশাপাশি মঞ্চ তৈরি করে অনশনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত অগস্ট মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক জেলা সফর শেষ করে ফিরে যাওয়ার পর দুর্গাপুজোর আগে সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ দিঘায় যত্রতত্র হকার বসা যাবে না বলে নির্দেশ জারি করে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে সৈকতে ঘোড়া, রিমোট চালিত ব্যাটারি গাড়ির মতো বিনোদনের উপাদানও নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু সে বার উচ্ছেদ অভিযানে নামার আগে বিজেপি ও হকারদের পাল্টা প্রতিরোধে অশান্তির আশঙ্কায় পিছু হটে প্রশাসন। সাময়িকভাবে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ থাকলেও গত ১৯ নভেম্বর ফের মাইকিং করে হকারদের সতর্ক করে জেলা প্রশাসন। ২৬ নভেম্বরের মধ্যে হকারদের সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশও দেওয়া হয়।
কিন্তু এখনও ওল্ড এবং নিউ দিঘায় কয়েক হাজার হকার রয়েছেন। হকারদের আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি (কাঁথি) তপন মাইতির অভিযোগ, ‘‘পুনর্বাসন স্টল বিলির ক্ষেত্রে শাসক দল স্বজনপোষণ এবং প্রচুর আর্থিক দুর্নীতি করেছে। দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ সব জেনেও নীরব।’’ তাঁর দাবি, ‘‘অবিলম্বে সমস্ত হকারদের উপযুক্ত পুনর্বাসন দিতে হবে। অন্যথায় হকার উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেব না।’’ প্রশাসনিকভাবে বুধবার উচ্ছেদ অভিযান হলে তাঁরা যে সহজে হাল ছেড়ে দেবেন না তা জানিয়েছেন চন্দন আচার্য নামে এক আন্দোলনকারী। তাঁর দাবি, ‘‘প্রশাসন পুনর্বাসনের আগে উচ্ছেদ করার জন্য এক ধাপ এগোলে, আমরাও পাল্টা প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত।’’
বিজেপি এবং আন্দোলনকারী হকারদের বক্তব্য মানতে নারাজ দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিএ)। ডিএসডিএ সূত্ত্রে খবর, রাজ্য সরকারের নির্দেশমতো দিঘায় পর্যটকদের যাতে ঘোরাঘুরিতে অসুবিধা না হয় সে জন্য সি বিচ এবং রাস্তা থেকে হকারদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য আগে থেকেই হকারদের পুনর্বাসন স্টল তৈরি করা হয়েছে। ওই সব স্টল বিতরের জন্য সমীক্ষা হয়। সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২ সালের আগে পর্যন্ত যে সব হকার বৈধভাবে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন, তাঁদের প্রাথমিকভাবে কুপন দেওয়া হয়। ডিএসডি-এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক মাসের মধ্যে ওই সব কুপন পর্ষদের অফিসে জমা দিতে বলা হয়েছিল। এরকম প্রায় হাজার দুয়েক হকার স্টল পেয়েছেন। যদিও এখনও অনেকে কুপন থাকা সত্ত্বেও স্টল পাননি বলে অভিযোগ।
এই বিষয়ে ডিএসডিএ-র এক আধিকারিক জানান, বেশ কিছু কুপন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তা ছাড়া কিছু স্টল তৈরির কাজ এখনও বাকি। সে ক্ষেত্রে বৈধ কুপন যাঁদের রয়েছে তাঁরা যাতে আপাতত ব্যবসা করতে পারেন তার জন্য পর্ষদের পক্ষ থেকে জায়গা বেছে দেওয়া হচ্ছে। তবে বাকিদের ক্ষেত্রে কোনওভাবে নিয়ম শিথিল করা হবে না।