রাত ৯টা: কলেজ মাঠের পাশ দিয়ে দাঁতাল পৌঁছল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে। নিজস্ব চিত্র।
আচমকা ব্যস্ত শহরের রাস্তায় দলছুট হাতি। প্রাণ বাঁচাতে পথচলতি মানুষের ছোটাছুটি। মোড়ে মোড়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা।
বৃহস্পতিবার রাতে এমনই দৃশ্যের সাক্ষী থেকেছে শহর মেদিনীপুর। কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি হল, কেন হাতিটিকে শহরতলিতেই আটকে রাখা গেল না, প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ উঠছে, এর পিছনে রয়েছে বন দফতরের গড়িমসি এবং পরিকল্পনার অভাব। রয়েছে পুলিশের গড়িমসিও। হাতিটি শহরতলিতে পৌঁছে গিয়েছিল বিকেলেই। শুরুতে বিষয়টি হালকাভাবে নিয়েছে বন দফতর এবং পুলিশের একাংশ। যখন গুরুত্ব বুঝেছে, তখন হাতি শহরে ঢুকে পড়েছে। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিমাঞ্চল) অশোকপ্রতাপ সিংহ অবশ্য বলেন, ‘‘কাছে জঙ্গল আছে। কোনওভাবে শহরের দিকে এসে এসেছে হাতিটি। শহরের মধ্যে ঢুকে গিয়ে আর বেরোনোর রাস্তা পাচ্ছিল না। তাই খানিক সমস্যা হয়েছে। তবে কোনও প্রাণহানি হয়নি, কেউ জখম হননি, অন্য ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি। দফতরের আধিকারিক-কর্মীরা খুব ভাল কাজ করেছেন।’’
হাতিটি সকালে খড়্গপুর গ্রামীণে ছিল, বিকেলে মেদিনীপুর শহরতলিতে পৌঁছল, হাতি খেদানোর পরিকল্পনা ঠিকঠাক থাকলে কি এ ভাবে শহরের মধ্যে ঢুকে পড়তে পারত? মুখ্য বনপাল (পশ্চিমাঞ্চল) বলেন, ‘‘হাতিটিকে জঙ্গলের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে পড়ে। ফিরে এসে রাস্তা না পেয়েই শহরে ঢুকে গিয়েছে।’’ সূত্রের খবর, হাতিটি ধর্মা হয়ে সূর্যনগর দিয়ে শহরে ঢুকেছে। সূর্যনগরের পাশ দিয়েই গিয়েছে জাতীয় সড়ক, শালবনির ভাদুতলাগামী। অনেকের মতে, সূর্যনগরে হুলাপার্টি মোতায়েন থাকলে কোনওভাবেই হাতিটি শহরে ঢুকতে পারত না। জাতীয় সড়ক ধরে ভাদুতলার দিকে চলে যেত। হাতিটি শহরে ঢুকে হবিবপুর, রাজাবাজার, পঞ্চুরচক হয়ে চলে আসে মেদিনীপুর কলেজে। ঘন্টা খানেক কলেজ ক্যাম্পাসে ছিল। পরে যায় মেদিনীপুর মেডিক্যালে। হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়ায়। পরিস্থিতি দেখে হাসপাতাল ক্যাম্পাসের একদিকে হাতিটিকে ‘ঘিরে’ রাখার চেষ্টা করে হুলাপার্টি। আনা হয় ঘুমপাড়ানি গুলি। হাসপাতাল ক্যাম্পাসে পৌঁছন রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিমাঞ্চল) অশোকপ্রতাপ সিংহ, মেদিনীপুরের ডিএফও সন্দীপ বেরোয়াল, মেদিনীপুরের এডিএফও বিজয় চক্রবর্তীরা। পৌঁছন জেলার পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার প্রমুখ। রাতে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে কাবু করা হয় দলছুট দাঁতালটিকে। গাড়িতে তুলে ছেড়ে দেওয়া হয় চাঁদড়ার শুখনাখালির জঙ্গলে। হাতিটি সুস্থ রয়েছে।
আগে একাধিক বৈঠকে ও ঘরোয়া আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন দফতর নিয়ে ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। লোকালয়ে হাতির হানা রুখতে কেন সাফল্য মিলছে না, প্রশ্ন তুলে তিনি বলেছেন, ‘‘দিনের পর দিন এটা চললে দফতরটা রেখে লাভ কী!’’ মেদিনীপুরের এক বন আধিকারিকের দাবি, ‘‘একাধিক এলাকায় হাতিটিকে ধরার মতো পরিস্থিতি পাওয়া গেলেও লোকজনের ভিড় থাকায় কিছু করা যাচ্ছিল না। প্রথম থেকেই চেষ্টা করা হয়েছিল, হাতিটিকে জাতীয় সড়ক দিয়ে ভাদুতলার জঙ্গলের দিকে পাঠিয়ে দেওয়ার। কিন্তু নানা কারণে তা সম্ভব হয়নি।’’ মেদিনীপুরের এক পুলিশ আধিকারিকের আবার সাফাই, ‘‘হাতি খেদানোর অভিজ্ঞতা আমাদের নেই!’’ ফের যদি একইভাবে শহরে দলছুট হাতি ঢুকে পড়ে? মেদিনীপুরের এক বন আধিকারিক বলেন, ‘‘হাতি যে আর আসবে না, বলা যায় না। তবে এ বার আমরা আরও বেশি সতর্ক থাকব।’’