মহালয়ার রাতে শহরে হাতি ঠাকুর

শনিবার রাতে বৃষ্টি পড়ছিল। তার মধ্যেই শহরের ঘোড়াধরা, ঝাড়গ্রাম থানার সামনের রাস্তা, হিন্দি স্কুলের মাঠ, কদমকানন মোড়, আনাজ বাজার লাগোয়া স্টেশন চত্বর, সুভাষ চকের মতো জনবহুল এলাকায় ঘুরে বেড়াল সেই হাতিটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share:

ঘোড়াধরা পার্কের মণ্ডপের সামনে ঘুরে গেল হাতি। শনিবার মাঝরাতে। নিজস্ব চিত্র

জঙ্গলমহলের কোনও না কোনও গাঁ-গঞ্জে রোজই প্রায় খাবারের সন্ধানে হাতি ঢোকে। ইদানীং অরণ্যশহরের রাস্তায় নেমে ও স্কুলের জানলা ভেঙে চাল খেয়ে যাচ্ছে রেসিডেন্সিয়াল হাতি খড়ু। সেই আতঙ্ককে সঙ্গে নিয়েই শনিবার, মহালয়ার গভীর রাতে ঝাড়গ্রাম শহরে ঢুকল এক দাঁতাল। রাস্তায় রাস্তায় দাপিয়ে বেরিয়ে শহরের ঘোড়াধরায় স্বসহায়ক গোষ্ঠীর মহিলাদের মহাসঙ্ঘ ভবনের কোলাপসিবল দরজা ভেঙে প্রায় ১০ বস্তা চাল খেল সে। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন মহাসঙ্ঘের দুই মহিলা।

Advertisement

শনিবার রাতে বৃষ্টি পড়ছিল। তার মধ্যেই শহরের ঘোড়াধরা, ঝাড়গ্রাম থানার সামনের রাস্তা, হিন্দি স্কুলের মাঠ, কদমকানন মোড়, আনাজ বাজার লাগোয়া স্টেশন চত্বর, সুভাষ চকের মতো জনবহুল এলাকায় ঘুরে বেড়াল সেই হাতিটি। জনতা, পুলিশ ও বনকর্মীর তাড়া খেয়ে ফেরার সময়ে ঘোড়াধরা পার্কে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ চত্বরে ঘুরে বেড়াল হাতিটি।

সেই দাঁতালকে খেদিয়ে শহর ছাড়া করতে বেশ বেগ পেতে হয়। গভীর রাতে পথে নামতে হয় ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলেইচ্চি, ঝাড়গ্রামের ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার প্রদীপ সেনগুপ্তকে। হুটার বাজিয়ে নামে ‘ঐরাবত’। শহরে হাতি ঢোকার খবর পেয়ে চলে আসেন ঝাড়গ্রাম থানার আইসি জয়প্রকাশ পাণ্ডে। আসে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম শহরের প্রান্তিক এলাকাগুলিতে এর আগেও বেশ কয়েক বার হাতি ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে এভাবে হাতি ঢুকে পড়ার ঘটনা নজিরবিহীন বলেই দাবি করছে বন দফতর। স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের অন্তপাতি গ্রামের রাস্তা দিয়ে শহরের ঘোড়াধরা পার্ক এলাকায় চলে আসে হাতিটি। স্ব-সহায়ক দলের অরণ্যসুন্দরী মহাসঙ্ঘের সদস্য মধুমিতা পড়িহারী, প্রণতি মাহাতো জানান, রাত ১২টা নাগাদ হাতিটি চড়াও হয়ে দু’টি কোলাবসিবল গেট ভাঙে। প্রায় ১০ বস্তা চাল খেয়ে নেয়। মধুমিতা বলেন, ‘‘আমরা কয়েকজন সঙ্ঘ ভবনেই ছিলাম। কোলাপসিবল গেট ভাঙার আওয়াজে বেরিয়ে এসেই হাতির সামনে পড়ে যাই। হাতিটি শুঁড় বাড়িয়ে আমাকে ধরতে গিয়েছিল। কোনও মতে পালিয়ে দোতলায় উঠে পুলিশ-প্রশাসনের লোকজনকে ফোন করি।’’ ঘোড়াধরা সর্বজনীনের সম্পাদক উজ্জ্বল পাত্র বলেন, ‘‘আমাদের শঙ্কা হচ্ছিল যে হাতিটি মণ্ডপ না ভেঙে না দেয়। ফের হাতি ঢুকলে কী যে হবে!’’

বনকর্মীরা বলছেন, এই হাতিটি একেবারেই অপরিচিত একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ হাতি। তাকে তাড়াতে কদমকাননের সিআরপি শিবিরের জওয়ানেরাও সাহায্য করেন। রাত তিনটে নাগাদ দাঁতালটিকে কদমকাননের কাছে রেল লাইন পার করিয়ে লালবাজার-খয়রাশুলির জঙ্গলের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

ডিএফও (ঝাড়গ্রাম) বাসবরাজ হলেইচ্চি বলেন, ‘‘দলছুট হাতিটি পথভুলে শহরে ঢুকেছিল বলে অনুমান। হুলাপার্টি ও বনকর্মারা নজরদারি করছেন।’’ শহরে হাতি ঢুকে পড়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে বন দফতরকে বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে। পুজোর পরে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ডেকে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা হবে।’’

বড় বিপর্যয় না ঘটলেও পুজোর মুখে এমন ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে অরণ্যশহরে। শহরবাসীর আশঙ্কা, হাতিটি একবার খাবারের খোঁজ পেয়েছে। হাতির ঘ্রাণ শক্তি প্রবল হয়। তাই শহরে ঢুকবে না কে বলতে পারে! শনিবার গভীর রাতে ঢুকেছিল বলে রক্ষা। ব্যস্ত সময়ে ঢুকলে কী হবে সেই নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement