পরীক্ষা শেষ। এ বার শুরু পাশ-ফেলের হিসেব কষা।
এই হিসেবের নির্দিষ্ট ফর্মুলা নেই। ভোটারদের মনের তল পাওয়ায় খুব সহজ কাজ নয়। তবু তারই মধ্যে রাজনীতির অলিন্দে ঘুরে বেড়ানো দুঁদে নেতারা অনেকটাই আন্দাজ করে ফেলতে পারেন, হাওয়াটা কোন দিকে।
মেদিনীপুর কেন্দ্রে ভোটের পর শাসক বা বিরোধী, কোনও পক্ষই একটি বুথেও পুননির্বাচনের দাবি করেনি। কিন্তু দলের অন্দরে বুথ ভিত্তিক ভোটের কাঁটাছেঁড়া করতে গিয়ে কখনও তারা স্বস্তিতে , কখনও আবর কপালে দুশ্চিন্তার বলিরেখা।
মেদিনীপুর বিধানসভায় ভোট পড়েছে ৮৪.৩৭%। তবে গ্রামীণ এলাকার ভাটপাড়া, ভুরসা, শালডহরা, কুকুরমুড়ি, পারুলিয়ার মতো বহু বুথে প্রদত্ত ভোট ৯৫%-এর বেশি। তৃণমূলের দাবি, জঙ্গলমহলে সরকারের উন্নয়ন দেখে মানুষ ঝেঁটিয়ে ভোট দিয়েছে। ফলে, ভোট যাবে সরকারের পক্ষে। যদিও বাম শিবিরের অভিমত, এই সব এলাকায় ভোটারদের সমর্থন তাদের পক্ষে যাবে। গ্রামীণ সাধারণ কৃষকেরা বামপন্থীদের সঙ্গেই রয়েছেন।
আবার যদি ধরা যায়, শহরের ভোটের কথা, সেখানে বেশ কিছু বুথে ভোট পড়েছে তুলনায় কম। মিশন বালিকা বিদ্যালয়, কলেজিয়েট বালিকা বিদ্যালয়-সহ কয়েকটি বুথে ৬১-৬৭% ভোট পড়েছে। তাতেও নিশ্চিন্ত শাসক-শিবির। কারণ, তাঁদের যুক্তি এ ক্ষেত্রে খাঁটি কংগ্রেস ভোটারা বাম প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারেননি। তাঁরা ভোটই দিতে যাননি। এই কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণাও বলেন, ‘‘কোনও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল ভোট দিতে যায়নি বলেই মনে হচ্ছে।’’ দলের নাম না করলেও বোঝা যায় ইঙ্গিতটা কংগ্রেসের দিকে। তবে বামপন্থীদের কাছে এটা স্বস্তির যে ওই ভোট তৃণমূলের দিকেও যায়নি।
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৮,২২০ ভোটে সন্তোষবাবুকে হারান মৃগেনবাবু। আর ২০১৪-র লোকসভায় মেদিনীপুর বিধানসভায় সিপিআইয়ের থেকে ৩৯,০৬৩ ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে দু’পক্ষেরই আশা, তারা জিতবে। তৃণমূলের মৃগেন্দ্রনাথ মাইতির ধারণা, “আমিই জিতব এবং আগের থেকে অনেক বেশি ভোটে।’’ আর সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রাণার বলেছেন, ‘‘কমিশন আরও একটু সক্রিয় থাকলে ভাল হত। তবু যা ভোট হয়েছে, তাতে আমরা আশাবাদী, মানুষের রায় আমাদের পক্ষেই যাবে।” আশা হারাচ্ছে না বিজেপিও। দলের প্রার্থী তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাল ভোট হয়েছে। এতে আমাদের ভোট বাড়বে বলেই ধারণা।’’
একই ছবি শালবনিতেও। প্রদত্ত ভোট ৮৭.৬৬% হওয়ায় এখানেও আশাবাদী দুই পক্ষ। তৃণমূল প্রার্থী শ্রীকান্ত মাহাতোর দাবি, “ভোট খুব ভাল হয়েছে। মানুষ আর সিপিএমকে চায় না। আর বিজেপি তো লড়াইয়েই নেই। ফলে, আমি ৪০-৫০ হাজার ভোটে জিতব।’’ এ দিকে, সিপিএম প্রার্থী শ্যামসুন্দর পাণ্ডেও জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। বলছেন, ‘‘জিতছি। তবে ব্যবধান জানতে ১৯ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’’ তবে সিপিএম প্রার্থী শালবনি বিধানসভায় কমিশনের ভূমিকায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। কারণ, এখানেই একাধিক বুথে গিয়ে তৃণমূল কর্মীদের হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। আঁধার নয়নে তো কেন্দ্রীয় বাহিনীর চোখের সামনে বাম প্রার্থী, এমনকী সংবাদমাধ্যমও আক্রান্ত হয়েছে। তিনটি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবিও জানিয়েছেন শ্যামবাবু। সিপিএমের অভিযোগ, ১০-১২টি বুথে পোলিং এজেন্ট দিতে পারেনি তারা। সেখানেই তৃণমূল ছাপ্পা মেরেছে। তা-ও দল জেতার আশা রাখছে কারণ অন্য ভোট হয়েছে নির্বিঘ্নে। ফলে, মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পেরেছেন বলেই আশা। ভোট ভাল হওয়ায় আশা রাখছে পদ্ম-শিবিরও। শালবনির বিজেপি প্রার্থী তথা দলের জেলা সভাপতি ধীমান কোলে বলেন, ‘‘শালবনির মানুষ সচেতন। সিপিএম আর তৃণমূল, দু’দলের অত্যাচারই তারা দেখেছে। ফলে, আমার জয় নিশ্চিত।’’
এ দিকে, তৃণমূল প্রার্থী হাজার পঞ্চাশেক ভোটে জেতার আশা করলেও দলেরই একাংশ অতটা আশাবাদী নন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাসক দলের স্থানীয় এক নেতার কথায়, “প্রদত্ত বেশি মানেই আমাদের সুবিধা, এমন না-ও হতে পারে। দলে কোন্দল রয়েছে। ফলে ফল কী হবে তা এখনই বলা যাবে না।’’
কার পক্ষে রায় দিলেন মানুষ তা জানতে আপাতত ১৯ মে-র অপেক্ষা।