দেবীর পায়ে অস্ত্র সঁপে দেন জওয়ানরা

মূর্তি নয়, এখানে পুজো হয় পটে। পুজোর বয়স একশো পেরিয়েছে। তবে রীতি মেনে শক্তির আরাধনায় ভাটা পড়েনি খড়্গপুরের সালুয়ার ‘ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল’ (ইএফআর) ক্যাম্পের পুজোয়।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

সালুয়া শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৭
Share:

শুরু হয়ে গিয়েছে ঘটপুজো। —নিজস্ব চিত্র।

মূর্তি নয়, এখানে পুজো হয় পটে।

Advertisement

পুজোর বয়স একশো পেরিয়েছে। তবে রীতি মেনে শক্তির আরাধনায় ভাটা পড়েনি খড়্গপুরের সালুয়ার ‘ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল’ (ইএফআর) ক্যাম্পের পুজোয়।

সালুয়ায় ক্যাম্প রয়েছে ইএফআর-এর তিনটি ব্যাটালিয়নের। প্রতিটি ব্যাটালিয়নের ক্যাম্পেই হয় দুর্গাপুজো। প্রথম ব্যাটালিয়নের পুজোই প্রাচীনতম। এখানেই দেবী পটে পূজিতা। প্রতি বছর দেওয়ালে দুর্গাপ্রতিমার পটচিত্র আঁকা হয়। আর প্রতিপদে শুরু হয় ঘট পুজো। চলে ষষ্ঠী পর্যন্ত। সপ্তমীতে পটে পুজো শুরু হয়।

Advertisement

ইএফআর-এর বাকি দু’টি ব্যাটালিয়নের ক্যাম্পে অবশ্য মূর্তিপুজোই হয়। নবমীতে দু’টি মহিষ, পাঁচটি পাঁঠা-সহ প্রতিটি ব্যাটালিয়ানের পুজোয় ১২টি করে পশু বলি হয়। মনোবাঞ্ছা পূরণ হলে ব্যক্তিগত ভাবেও অনেকে পশু বলি দেন। নবমীতে জওয়ানরা নিজেদের অস্ত্রও পুজো করান পুরোহিত দিয়ে।

সময়টা ১৯০৭ সাল। তখনও সালুয়ায় ইএফআর ক্যাম্প গড়ে ওঠেনি। গোর্খা জনজাতির একাংশ তখন ‘ঢাকা মিলিটারি পুলিশে’(ডিএমপি)-এ কর্মরত। মনোবল বাড়াতে সেই সময়ই ‘নবরাত্রি’ ব্রত মেনে বর্তমান বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) দুর্গাপুজোর শুরু। প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত টানা ন’দিন পুজো হয় বলে এর নাম নবরাত্রি ব্রত। খড়্গপুরের হিজলিতে এখন যেখানে আইআইটি রয়েছে, ১৯৪৭ সালে সীমান্তে পাহারার জন্য বাংলাদেশ মিলিটারি পুলিশের একটি অংশকে সেখানে নিয়ে আসা হয়। ওই বছর থেকেই হিজলিতে শুরু হয় দুর্গাপুজো।

রাজ্য সরকারের স্বীকৃতি পাওয়ার পর ১৯৫০ সালে এই বাহিনীর নাম হয় ‘ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল’ (ইএফআর)। গঠিত হয় ইএফআর-এর প্রথম ব্যাটালিয়ন। হিজলিতে ১৯৫১ সালে গড়ে ওঠে আইআইটি। ওই বছর ইএফআর ক্যাম্প হিজলি থেকে সরে যায় সালুয়ায়। তারপর থেকে সালুয়ায় হচ্ছে পুজো। ইএফআরের নেপালি জওয়ানদের উদ্যোগেই পুজো চলে আসছে।

প্রথম ব্যাটালিয়ানের পুজোর কর্মকর্তা ইএফআর রাইফেল ম্যান শ্যাম থাপা বলেন, “১৯০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া এই পুজোর ইতিহাস নিয়ে নানা মত রয়েছে। সালুয়াতে এটাই সবচেয়ে পুরনো পুজো।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা শুনেছি, আমাদের এক পুরোহিত মূর্তি পুজো করায় নরবলি দেওয়ার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। সেই থেকে পটেই হয় পুজো।” আর ইএফআর-এর ‘কুক’ কুঞ্জলাল রাভার কথায়, “এই পুজো আমাদের শক্তি যোগায়। আমরা যে কোনও যুদ্ধে যাওয়ার আগে দেবী দুর্গাকে স্মরণ করেই যাই।”

১৯৬২ ও ১৯৮৪ সালে ইএফআরের আরও দু’টি ব্যাটালিয়ন গড়ে ওঠে। বাড়ে পুজোর সংখ্যাও। তৃতীয় ব্যাটালিয়ানের নায়েক সুবেদার স্বপনকুমার থাপা, কনস্টেবল মেজর দুর্গা ছেত্রীরা বলছিলেন, “দেবী দুর্গা যেমন অশুভ শক্তির বিনাশ করেছিলেন, আমরাও তেমনই দেশের অশুভ শক্তির বিনাশ করি। তাই নিজেদের মনোবল বাড়াতেই নবরাত্রি ব্রত রেখে দুর্গার আরাধনা করি। এ জন্যই দেবীর কাছে সব অস্ত্র সমর্পণ করে পুজো দিই।” তাঁদের দাবি, অশুভ শক্তির বিনাশ করতেই অসুররূপী মহিষও বলি দেওয়া হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement