কাঁথির ক্লাব চৌরঙ্গীর মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র।
পুজো নিয়ে আগের নির্দেশ হাইকোর্ট কিছুটা শিথিল করলেও এবারের পুজো মণ্ডপ দর্শকশূন্যই থাকছে। বুধবার হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরে কাঁথি থেকে তমলুক, হলদিয়া থেকে এগরা সর্বত্রই দুর্গাপূজো ঘিরে অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ে নিরাশ অনেক দর্শনার্থী। এমনকী পুজোর প্রধান অনুষঙ্গ অঞ্জলি, সিঁদুর খেলার মতো রীতি পালন করা আদৌ যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
দু’দশক ধরে দুর্গাপুজো করে আসছে শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের নোনাকুড়ি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। করোনা পরিস্থিতিতেও মণ্ডপ, প্রতিমা এবং আলোকসজ্জার আয়োজন করেছেন তাঁরা। এমনকী উদ্বোধক হিসেবে রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী আমন্ত্রিত ছিলেন। বুধবার ওই অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার জন্য উদ্যোক্তাদের জানিয়ে দেন শুভেন্দু।এমন পরিস্থিতিতে পুজো কমিটির কর্মকর্তা তথা সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মন বলেন, ‘‘একেবারে শেষ মুহূর্তে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। আদালতের রায় মেনে নিতে হচ্ছে। তবে এমন নির্দেশ আগে দেওয়া বলে এতসব আয়োজন করা হত না।’’
কাঁথির নান্দনিক ক্লাবের পুজো জেলায় অন্যতম বিগ বাজেটের পুজো। এবছরও পুজোর কয়েকদিন আগে থেকেই আলো জ্বলে গিয়েছে মণ্ডপে। বিশাল এলাকাজুড়ে মণ্ডপ দেখার জন্য জেলার নানা প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর উদ্যোক্তারা বিকল্প ভাবনা শুরু করেছেন। ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা রাম পন্ডা বলেন, ‘‘সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ড থেকে শহরের মধ্যস্থল পর্যন্ত চার জায়গায় জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হবে। একইসঙ্গে ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে পুজোর সমস্ত কিছু সরাসরি দেখানো হবে।’’
বড় বড় পুজোর উদ্যোক্তারা দর্শনার্থীদের জন্য পুজো দেখার বিকল্প ব্যবস্থা করলেও সমস্যায় ছোট এবং মাঝারি মাপের পুজো কমিটিগুলি। বেশ কিছু পুজোর উদ্যোক্তারা জানালেন, এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। উদ্যোক্তাদের মতো বিড়ম্বনায় বহু দর্শনার্থীও। আশি ছুঁইছুঁই কাঁথি-৩ ব্লকের বিলাসপুর গ্রামের কল্পনা মাইতি বলেন, ‘‘জীবনে এই প্রথম মায়ের পায়ে অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারব না। তবে রীতি মেনে অষ্টমী তিথিতে উপবাস করব। বাড়িতে সপরিবার নিরামিষ রান্না হবে।’’ রাজা বাজার এলাকার বাসিন্দা জ্যোৎস্না জানার কথায়, ‘‘মণ্ডপে গিয়ে অঞ্জলি দেওয়া হবে না। তবে গৃহদেবতার কাছেই অঞ্জলি দেব।’’
এ বার মণ্ডপে নো এন্ট্রি জোন এলাকায় বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলা যাবে না বলে হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে। রাজা বাজার এলাকার মহিলা পরিচালিত দুর্গাবাড়িতে সিঁদুর খেলায় যোগ দিতে আসেন এলাকার প্রচুর মহিলা। হাইকোর্টের রায়ে তাঁদের মন খারাপ।