পুরপ্রধান সৌমেন খানকে রং দিচ্ছেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিনহা। মেদিনীপুরে। নিজস্ব চিত্র
সাউন্ড বক্সে তখন বাজছে, ‘ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল, লাগল যে দোল...’। বসন্ত উৎসব প্রাঙ্গণে পাশাপাশি দেখা গেল যুযুধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের। রাজনীতির রং থেকে রঙের রাজনীতি! রাজনীতি ‘ভুলে’ সব রং মিলেমিশে একাকার হল শহর মেদিনীপুরে। যুযুধান রাজনৈতিক দলের নেতারা একে অপরকে আবির দিয়ে রাঙিয়ে দিলেন। দোলের শুভেচ্ছা জানালেন।
এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ বসন্ত উৎসবের ছবি দেখা গিয়েছে মেদিনীপুরে, বিদ্যাসাগর হল চত্বরে, দোলের দিন। এখানে বসন্ত উৎসবের আয়োজন ছিল। উদ্যোগ মেদিনীপুর বসন্ত উৎসব কমিটির। এ বার ছিল উৎসবের ৪১ তম বর্ষ। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলেছে নানা অনুষ্ঠান। উৎসব প্রাঙ্গণে পাশাপাশি দেখা গিয়েছে সৌমেন খান, তাপস সিংহ, অরূপ দাস প্রমুখকে। সৌমেন মেদিনীপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান, তাপস সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, অরূপ বিজেপির জেলা সহ- সভাপতি। রাজনৈতিক মতবিরোধ, ভেদাভেদ ‘ভুলে’ রঙের উৎসব মাততে দেখা গিয়েছে এঁদেরও। উৎসবের অন্যতম আহ্বায়ক, সঙ্গীতশিল্পী আলোকবরণ মাইতি বলছিলেন, ‘‘বাঙালির অন্যতম সেরা মহামিলনের উৎসব তো বসন্ত উৎসবই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এই উৎসব সবার রঙে রং মেলানোর উৎসব।’’
সকাল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছিল উৎসব প্রাঙ্গণে। নাচে, গানে, কথায়, কবিতায়, আবির খেলায় বসন্তোৎসব পালিত হয়েছে। কারও গালে হাল্কা আবিরের ছোঁয়া, কারও মনে হাল্কা রঙের দোলা। চিরাচরিতভাবেই এখানে বসন্ত উৎসবে মেতেছেন সকলে। রঙের উৎসবে রঙিন হয়ে পুরপ্রধান সৌমেন বলছিলেন, ‘‘প্রতি বছরই এখানে আসি। অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। ভাল লাগে।’’ তাপসও বলছিলেন, ‘‘মেদিনীপুরে থাকলে দোলের দিন সকালে এখানে চলে আসি। অনেকের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়।’’ রঙে রঙিন হয়েছিলেন অরূপও। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে সৌহার্দ্যপূর্ণ বসন্ত উৎসব হয়। এলে নিজেরও ভাল লাগে। দোলের দিন প্রতি বছরই এখানে আসি।’’ শহরের নানা জায়গায় বসন্ত উৎসবের আয়োজন ছিল। শরৎপল্লির মাঠে বসন্তোৎসবের আয়োজন ছিল। গোটা মাঠ জুড়ে যে দিকে চোখ গিয়েছে, সে দিকেই শুধু যেন রঙের মেলা! মেদিনীপুর ড্যান্সার্স ফোরামের উদ্যোগে রবীন্দ্র নিলয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠান হয়েছে। অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘বাসন্তী’।
দুপুরের দিকে বিদ্যাসাগর হল চত্বরে এসেছিলেন এমকেডিএ- র চেয়ারম্যান তথা খড়্গপুরের (গ্রামীণ) তৃণমূল বিধায়ক দীনেন রায়। এখানে বসন্তোৎসব তখন শেষের মুখে। দীনেন বলছিলেন, ‘‘সকাল থেকে কয়েকটি এলাকায় যেতে হয়েছিল। তাই এখানে আসতে খানিক দেরি হয়ে গেল। দোলের দিন প্রতি বছরই এখানে আসি।’’
বুধবার, হোলির দিন সকালে মেদিনীপুরে আসেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। যান একাধিক মন্দিরে। পরে রঙের উৎসবে মেতে ওঠেন তিনিও। দিলীপ বলছিলেন, ‘‘মঙ্গলবার দোলযাত্রা ছিল। আমি তমলুকে ছিলাম। প্রাচীন সব মন্দিরে গিয়েছি। গ্রামে গিয়ে দোল খেলেছি। আজকে হোলি। মেদিনীপুরে মন্দিরে এলাম। সকলের সঙ্গে হোলি খেলেছি।’’ চলেছে জনসংযোগ।
দোল, হোলিতে সৌহার্দ্যের মেলবন্ধনে নীল রঙে মিশে গিয়েছে লাল! সবার কাছে বসন্তোৎসব যেন সৌজন্যেরও প্রতীক হয়ে থাকল!