কেশিয়াড়িতে জেলাশাসক। সোমবার রাতে। নিজস্ব চিত্র।
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের ঘূর্ণিঝড়ের ভ্রূকুটি। আমপানের পরে এ বার আসছে ‘ইয়াস’। চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুর, দাঁতন, কেশিয়াড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায়। খালি করা হয়েছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলি। বাসিন্দাদের আশ্রয় শিবিরে সরানো হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এসডিআরএফ) ২টি দল জেলায় এসেছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) ৭টি দল জেলায় এসে পৌঁছচ্ছে। পাশাপাশি জেলায় আসছে সেনাও।
জেলাশাসক রশ্মি কমল মানছেন, ‘‘এনডিআরএফ, এসডিআরএফের দল থাকছে। সেনার একটি দলও থাকছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধারকারী দলগুলিকে রাখা হয়েছে।’’ অনুমান, ঘূর্ণিঝড়ের বেশি প্রভাব পড়বে মোহনপুর, দাঁতন, কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়, সবং, পিংলা, ডেবরা, খড়্গপুর, মেদিনীপুর প্রভৃতি এলাকায়। ভারী বৃষ্টির প্রভাব পড়বে ঘাটালে। টানা ভারী বৃষ্টি হলে ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা। প্রশাসন সূত্রে খবর, এসডিআরএফের একটি দলকে পাঠানো হয়েছে দাসপুরে। আরেকটি দলকে পাঠানো হয়েছে দাঁতন- ২ ব্লকে। এনডিআরএফের একটি করে দলকে রাখা হচ্ছে মোহনপুর, দাঁতন- ১, কেশিয়াড়ি, সবং, ডেবরা, খড়্গপুর এবং ঘাটালে। সেনার ৮০ জনের দলটিকে আপাতত রাখা হচ্ছে বেলদায়। প্রয়োজন মতো দলটিকে পাঠানো হবে।
প্রশাসনের লক্ষ্য, বড়সড় বিপর্যয় এড়ানো। প্রাণহানি ঠেকানো। সেই মতো যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নদী তীরবর্তী গ্রামগুলি খালি করা হয়েছে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নদীর ধারের এলাকাগুলির বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’’ জানা যাচ্ছে, জেলা জুড়ে প্রায় ১,৫০০টি আশ্রয় শিবির তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ৩ লক্ষ মানুষকে সেই সব শিবিরে সরানো হয়েছে। কিছু এলাকা থেকে গ্রামবাসীদের বার করে আনতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় স্থানীয়দের বোঝাচ্ছেন ব্লকের প্রশাসনিক আধিকারিকেরা।
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের জেলা আধিকারিক দেবব্রত সাউ বলেন, ‘‘নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে গ্রামবাসীদের সরিয়ে আনার কাজ অনেকটাই এগিয়েছে।’’ ইয়াস মোকাবিলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার জেলাস্তরে বৈঠক হয়েছে। ব্লকস্তরেও বৈঠক হয়েছে। ঝড়ের তীব্রতার বিষয়টি মাথায় রেখেই কোথাও চূড়ান্ত সতর্কতা, কোথাও মাঝারি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে সোমবার রাতেই কেশিয়াড়িতে যান জেলাশাসক রশ্মি কমল। অতিরিক্ত জেলাশাসকেরা ও জেলা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকেরাও এক-একটি ব্লক পরিদর্শন করেছেন। মঙ্গলবার দিনভর আকাশ মেঘলা ছিল। মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হয়েছে। আজ, বুধবার অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘার মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছ দিয়েই ‘ইয়াস’ অতিক্রম করবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। ঝড়ের সঙ্গে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
করোনা-দুর্ভোগের মধ্যেই তাই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড়। আশ্রয় শিবিরে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের অন্তত কাল, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়ি না- ফেরার অনুরোধ করা হয়েছে। কেশিয়াড়িতে আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই নেওয়া মানুষদের উদ্দেশে জেলাশাসককে বলতেও শোনা গিয়েছে, ‘‘অন্তত তিন দিন আপনারা এখানে থাকুন।’’ সঙ্গে জুড়েছেন, ‘‘সকলে মাস্ক পরবেন। দূরত্ব রেখে থাকবেন। আমরা চাইছি না, এই সময়ে মাটির বাড়িতে কেউ থাকুন। যাঁরা এখনও গ্রামে রয়েছেন, ওঁদেরও বলুন যাতে শিবিরে চলে আসেন।’’
জেলায় কতটা ভয়াল রূপ নেবে ঝড়, উদ্বেগ এখন তা নিয়েই।