শুনেছিলেন প্রতি সোমবার প্রতিবিধান শিবির বসে কালেক্টরেটে। সাধারণ মানুষের নালিশ শোনেন জেলাশাসক। এ কথা শুনেই সোমবার কালেক্টরেটে এসেছিলেন নির্মলা হাজরা। বয়স আশি ছুঁইছুঁই। বাড়ি কেশপুরের আনন্দপুরের বগছড়িতে। সেখান থেকে বাসে করেই তিনি মেদিনীপুরে আসেন। শিবিরে এসে বসেছিলেন এক কোণের চেয়ারে। দেখতে পেয়ে বৃদ্ধাকে ডেকে নেন জেলাশাসক রশ্মি কমল। শোনেন তাঁর সমস্যার কথা। সব শুনে দুপুরের খাওয়া এবং বাড়ি ফেরার জন্য বাসভাড়া বাবদ বৃদ্ধাকে ২৪০ টাকা দেন জেলাশাসক।
জেলাশাসকের কাছ থেকে এই অর্থ সাহায্য পেয়ে বৃদ্ধা বলছিলেন, ‘‘এখানে এসে যে দুপুরের খাওয়ার খরচ, বাসভাড়ার টাকাও পাব ভাবিনি। জেলাশাসক সত্যিই মানবিক। আমি আমার অসহায়তার কথা বলেছি। উনি সব মন দিয়ে শুনেছেন। পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন। আমার সমস্যার কথা জানাতে পেরেই আমি খুশি।’’ নির্মলার কথায়, ‘‘বুড়ো হয়েছি। তবে আমি এখনও আমার নিজের প্রয়োজনের (দৈনন্দিন জীবনযাপনের খরচ) নিজে চালিয়ে নিই।’’ জেলাশাসক বলেন, ‘‘উনি (নির্মলা) তাঁর সমস্যার কথা জানাতে এসেছিলেন। গরিব মানুষ। বাসে করে মেদিনীপুরে আসেন। সব শুনে মনে হয়েছে, কিছু সাহায্য করা দরকার। তাই জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ওই সাহায্য করা হয়েছে।’’
নবান্নের নির্দেশ রয়েছে যে, প্রতি সোমবার জেলায়, মহকুমায়, ব্লকে জনঅভিযোগ প্রতিবিধান শিবির করতে হবে। সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা শুনতে হবে। সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে হবে। সেই মতো পশ্চিম মেদিনীপুরেও এই শিবির শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কালেক্টরেটে বসেন জেলাশাসক। শোনেন মানুষের সমস্যার কথা, অভাব- অভিযোগ। এদিনও অনেকে কালেক্টরেটের এই শিবিরে এসেছিলেন তাঁদের সমস্যার কথা জানাতে। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন নির্মলা। বৃদ্ধার নালিশ, তিনি এখনও বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতার টাকাও পান না। জেলাশাসককে বৃদ্ধা জানিয়েছেন, অর্থাভাবের মধ্যে কোনও রকমে দিন কাটে তাঁর। তিনি মুড়ি বিক্রি করেন। এ পাড়া, ও পাড়া ঘুরে বাড়ি বাড়ি মুড়ি বিক্রি করেন। বৃদ্ধা এখনও বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতার টাকা পাননি শুনে অবাকই হন জেলাশাসক। খোঁজখবর নেন তিনি। জেলাশাসকের কাছে এক আবেদনপত্রও জমা দেন বৃদ্ধা।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, আবেদনটি নথিভুক্ত করে রেখে দেওয়া হয়েছে। নতুন ভাতা প্রাপকদের তালিকা তৈরির কোনও নির্দেশ এখনই নেই। তবে এমন নির্দেশ এলেই ওই বৃদ্ধার আবেদনটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।