দক্ষিণ-পূর্ব রেলের প্রথম মহিলা যাত্রিবাহী ট্রেনের চালক দীপান্বিতা দাস। — নিজস্ব চিত্র।
দশ বছরেরও বেশি সময় পণ্যবাহী ট্রেন চালিয়েছেন। এ বার যাত্রিবাহী ট্রেন চালানোও শুরু করে দিলেন খড়্গপুরের দীপান্বিতা দাস। রেলের পরিভাষায় তিনি লোকো পাইলট। পদোন্নতি পেয়ে একাদশীর দিনই প্রথম যাত্রিবাহী ট্রেন নিয়ে তিনি মেদিনীপুর থেকে হাওড়া আসেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে এ কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, দীপান্বিতা প্রথম মহিলা হিসাবে খড়্গপুর ডিভিশনের মেদিনীপুর-হাওড়া শহরতলি সেকশনে যাত্রিবাহী ট্রেন চালিয়ে নিয়ে এলেন।
দক্ষিণ-পূর্ব রেল জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে মেদিনীপুর স্টেশন থেকে ট্রেন নিয়ে রওনা দেন। হাওড়া পৌঁছে আবার সকাল সাড়ে ১০টায় একই রুটের অন্য একটি লোকাল ট্রেন চালিয়ে মেদিনীপুর ফেরেন। দীপান্বিতা ২০০৩ সালে আদ্রা ডিভিশনের আনাড়াতে রেলের চাকরিতে যোগ দেন। ২০০৬ সালে খড়গপুর ডিভিশনে বদলি। ২০১৪ থেকে পণ্যবাহী ট্রেনের লোকো পাইলট হিসেবে কাজ শুরু। দু’মাসের প্রশিক্ষণ শেষে একাদশীর দিন প্রথম মেদিনীপুর থেকে হাওড়া আসেন সেই লোকাল ট্রেন চালিয়েই। যে হেতু প্রথম বার লোকাল ট্রেন চালাচ্ছেন, তাই রেলের নিয়ম অনুযায়ী পাশে থাকতে হয় চিফ লোকো ইন্সপেক্টরকে। দীপান্বিতার সঙ্গে ছিলেন তপনকুমার সামন্ত। তিনি বলছেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী, পর পর পাঁচ দিন ওঁর সঙ্গে থাকতে হবে।’’ আর দীপান্বিতা বলছেন, ‘‘বুধবার সকালে লোকাল ট্রেন নিয়ে হাওড়া গিয়েছিলাম। আবার সেখান থেকে মেদিনীপুরে ফিরিয়ে এনেছি আর একটি লোকাল ট্রেন।’’
খড়্গপুর শহরের বাড়িতে রয়েছে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলে এবং মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়ে। স্বামীও রেলেই চাকরি করেন। ট্রেন চালাতে হলেও বাড়ির কাজে ফাঁকি নেই দীপান্বিতার। কাকভোরে ঘুম থেকে উঠে রান্নাবান্না করে সবাইকে খাইয়ে স্নান সেরে নিজে মুখে দেন কিছু। তার পর ব্যাগ কাঁধে দৌড় স্টেশনের দিকে। সঙ্গের টিফিন বাক্সে থাকে দুপুরের খাবার। একটু সময় পেলে কেবিনে বসেই খেয়ে নেন সে সব। এর আগে এক দশক সময় ধরে পণ্যবাহী ট্রেন চালিয়েছেন। এ বার পদোন্নতি পেয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের চালকের আসনেও বসে গেলেন দুই সন্তানের মা দীপান্বিতা। নিজের এই অগ্রগতিতে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের প্রথম মহিলা যাত্রীবাহী ট্রেনের চালকের। তিনি বলছেন, ‘‘পণ্যবাহী ট্রেনে সাধারণত সময় একটু বেশি লাগে। যাত্রিবাহী ট্রেনে সেটা একটু কম। ট্রেন চালানোর আগে শারীরিক পরীক্ষার পরেই ট্রেন চালানোর অনুমতি মেলে। এখানে নারী, পুরুষ বলে কোনও আলাদা ব্যাপার নেই। সবাই সমান। তাই আমার প্রমাণ করার কিছুই নেই। এত দিন ধরে ট্রেন চালাচ্ছি, ভয়েরও কিছু নেই।’’