হিজলি স্টেশনে দিলীপ ঘোষ। ছবি: ভিডিয়ো গ্র্যাব।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় উদাসীনতাকে দায়ী করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ঘাটালে দাঁড়িয়ে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, বন্যার সময় তৃণমূলনেত্রী শুধু জলে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে আসেন। গত ১০ বছরে বন্যা নিয়ন্ত্রণে কোনও পদক্ষেপই করেনি তাঁর সরকার। শুধু তাই নয়, কেন্দ্র টাকা দিলেও, সেই টাকা বন্যা সামাল দেওয়ার কাজে লাগানো হয়নি বলে দাবি করেন দিলীপ।
বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার ঘাটাল যাচ্ছেন মমতা। তার আগে শনিবার সেখানে পৌঁছন দিলীপ। দিল্লি থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে চেপে হিজলি স্টেশনে নামেন তিনি। সেখান থেকেই মমতা এবং রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেন। দিলীপ বলেন, ‘‘নিজে না পারলে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী তিনি। বন্যা নিয়ন্ত্রণে কী করেছেন? কলকাতাকেই বাঁচাতে পারছেন না, ঘাটাল, খানাকুল তো দূরের কথা। তিন বছর আগে উত্তরবঙ্গে বন্যা হয়েছিল। দুই দিনাজপুর, মালদহ বন্যায় ভেসেছিল। উনি মালদহ গিয়ে ছবি তুলে চলে গেলেন। দিনাজপুর গেলেন না। আমি কিন্তু নৌকো ঘুরিয়ে গিয়েছিলাম। এ বারেও ছবি তুলে চলে গিয়েছেন। পরের বছর ফের বন্যা হবে। উনি ফের ছবি তুলতে আসবেন।’’
বছরের পর বছর আলোচনা হলেও, কেন্দ্রের উদাসীনতার জন্যই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান আজ পর্যন্ত রূপায়িত হয়নি বলে গত কয়েক দিনে একাধিক বার অভিযোগ উঠে এসেছে তৃণমূল থেকে। কিন্তু তা উড়িয়ে দিয়েছেন দিলীপ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিভিন্ন প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। সব ওঁর ভাইদের পেটে চলে গিয়েছে। কপালেশ্বর নদীর জন্য ২২৫ কোটি টাকা দিল্লি থেকে নিয়ে এসেছিলেন প্রাক্তন সেচমন্ত্রী মানসবাবু। সেই টাকা কোথায় গেল? নদীটিই আজকাল খুঁজে পাওয়া যায় না। জল বেরনোর রাস্তা নেই। ডিভিলিকে খামোকা দোষারোপ করা হচ্ছে। রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে তবেই জল ছাড়ে ডিভিসি। এখন সামলাতে পারছে না বলে ডিভিসি-কে দোষ দেওয়া হচ্ছে।’’
মমতা প্রধানমন্ত্রী না হওয়া পর্যন্ত ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়িত হওয়া সম্ভব নয় বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেন ঘাটালের সাংসদ দেব। তাঁকেও কটাক্ষ করেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর দিদি তো গত ১০ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী। উনি নিজেও সাত বছরের সাংসদ। এত দিনে কী করলেন? ওঁরা ভেবেছেন, এ ভাবেই চলে যাবে। মানুষ কি জলে ভাসবেন বলে ভোট দিয়েছিলেন? এখন বলছেন, দিদি প্রধানমন্ত্রী হলে সুরাহা হবে। সাত মণ তেল হবে, আর রাধা নাচবে। তত দিন যদি কেউ বেঁচে থাকেন, দেখা যাবে।’’
তবে বন্যা পরিস্থিতিত নিয়ে যেমন তৃণমূল-বিজেপি টানাপড়েন চলছে, তেমনই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ নিয়ে নতুন করে চাপানউতর শুরু হয়েছে। মুকুল রায়ের পর রাজীবও তৃণমূলের দিকে পা বাড়াচ্ছেন কি না জল্পনা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে দিলীপ বলেন, ‘‘সবাই নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে। কে কার সঙ্গে বৈঠক করল। কে কী টুইট করল, কে ফেসবুকে কী করল, এ সব নিয়ে মাথা ঘামায় না বিজেপি। আমরা দেশের স্বার্থে রাজনীতি করি।’’