ছোট ট্যাংরায় কম্বল বিতরণে দিলীপ। নিজস্ব চিত্র
হিরো কি তবেই ব্যাকস্টেজেই থাকবেন! আর বরাবরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে লড়াই করবেন মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র! পুরভোটের আবহে বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায় ও সাংসদ দিলীপ ঘোষের গতিপ্রকৃতি দেখে এমন সম্ভাবনা নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে।
রেলশহরে ২০১৫ সালের পুরসভা নির্বাচনে ৭টি আসন দখল করেছিল গেরুয়া শিবির। ২০১৬সালে বিধানসভা নির্বাচনেও মিলেছিল সাফল্য। শহরের মিথ দশবারের বিধায়ক ‘চাচা’ জ্ঞান সিংহ সোহনপালকে হারিয়ে জিতেছিলেন দিলীপ ঘোষ। এর পরে ২০১৯সালে লোকসভা নির্বাচনে ফের সেই দিলীপই এই শহরেই ৫০হাজার ভোটে ‘লিড’ পেয়ে হয়েছেন সাংসদ। মাঝে বিধানসভা উপনির্বাচনে জেতেন তৃণমূলের প্রদীপ সরকার। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফের এই আসন ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। বিধায়ক হয়েছেন রুপোলি পর্দায় নায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়। তবে গত কয়েক মাসে নানা কাজে বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছিল দলের বিধায়ক হিরণের গলায়। শেষমেশ প্রকাশ্য রাস্তায় সংঘর্ষেও জড়িয়েছিল সাংসদ-বিধায়কের অনুগামীরা। তার পরেই বিধায়কদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া হিরণ আর রেলশহরে আসেননি।
এই আবহে শহরের পুরভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে হিরণের দল বিজেপি। ইতিমধ্যেই পাশের শহর মেদিনীপুরের ধাঁচে জেলা ও মণ্ডলের নেতৃত্বদের ৩৫টি ওয়ার্ডে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত শহরে দেখা যাচ্ছে না বিধায়কের মুখ। হিরণ বলেন, “আমি সামান্য একজন বিধায়ক। শহরে বিধায়ক হিসাবে মানুষের জন্য যতটুকু কাজ করার করছি। দলের সাংগঠনিক বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। দল আমাকে যা বলবে সেই মতো কাজ করব।’’ এর পাশাপাশি তিনি যোগ করেন, ‘‘পর্যবেক্ষক নিয়োগের বিষয়টি আপনাদের থেকেই শুনলাম। আমার মতে এখন দেশের যা পরিস্থিতি তাতে মানুষের স্বাস্থ্য, আর্থিক দুর্দশা নিয়ে বেশি ভাবা উচিত।”
শহরের বিধায়ক যখন পুরভোট নিয়ে যখন কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত তখন অন্য মনোভাব সাংসদের। বুধবারই বেলদায় কম্বল বিতরণ কর্মসূচি সেরে রেলশহরে আসেন দিলীপ। মাস খানেক আগে ধারাবাহিকভাবে কম্বল বিতরণ করে জনসংযোগে জোর দিয়েছিলেন হিরণ। সেই কম্বল বিতরণ কর্মসূচি ঘিরেই সাংসদ-বিধায়কের অনুগামীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন। কিন্তু বিধায়ক যখন মাঠছাড়া তখন সেই মাঠে এসে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট ট্যাংরা ও ৩২নম্বর ওয়ার্ডের আয়মায় কম্বল বিতরণ করেন সাংসদ দিলীপ। তিনি বলেন, “পুরভোটের প্রচারে তো আমি পুরোদমে নেমে গিয়েছি। খড়্গপুরে-মেদিনীপুরে থাকছি। সকালে প্রাতর্ভ্রমণে জনসংযোগ করছি। মণ্ডল, বুথস্তরে নজর দিচ্ছি। এই কম্বল বিতরণও অবশ্যই সেই জনসংযোগের অঙ্গ।”
আশায় কোমর বাঁধছে বিজেপি। শহরের বাসিন্দা তথা রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “দিলীপদা ও হিরণ দু’জনই বিজেপির লোক। বৈঠকে ডাকা হলেও বিধায়ক নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় অনেক সময় হয়তো আসতে পারেন না। এসবের জেরে কেউ নিজেকে সাংসদ বা বিধায়কের ঘনিষ্ঠ বলে যদি প্রচার করে সেটা ঠিক নয়। এই বার্তা আমরা খড়্গপুরে ছড়িয়ে দেব। আমরা পুরবোর্ড গড়বই। এক্ষেত্রে সাংসদ ও বিধায়ক নিশ্চয় শহরে পুরভোটের প্রচারে থাকবে।” অবশ্য এমন ঘটনায় বিজেপিকে খোঁচা দিচ্ছে তৃণমূল। পুরপ্রশাসক প্রদীপ সরকার বলেন, “হিরণ এখন বিজেপির নায়ক না ভিলেন সেটা নিয়েই মানুষ বিভ্রান্ত। আগে বিজেপির সাংসদ-বিধায়ক এক হয়ে মানুষের কাজ করুক তার পরে পুরবোর্ড দখলের স্বপ্ন দেখবে।”