আউটডোরে ভিড় রোগীদের। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।
নামেই ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)।
৬ মাস ধরে রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষার যন্ত্র অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। সেটি সারানোর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ভেন্টিলেশনে থাকা মুমূর্ষু রোগীদের রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নির্ণয় করার জন্য আর্টারিয়্যাল ব্লাড গ্যাস অ্যানালাইজার (এবিজি) যন্ত্রটি রয়েছে। যকৃৎ সংক্রান্ত পরীক্ষা এবং রেচন সংক্রান্ত পরীক্ষাগুলির জন্য সেমি অটোমেটেড বায়ো কেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার যন্ত্রটিও আছে। কিন্তু রি-এজেন্টের অভাবে ওই দু’টি যন্ত্রে কোনও কাজ হয় না।
সিসিইউতে মাল্টি প্যারা মনিটর-সহ ১২ টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, প্রায়ই গোটা পাঁচেক মনিটর কাজ করে না। কয়েকটি এখনও দেওয়ালে টাঙানোও হয়নি।
চূড়ান্ত অব্যবস্থার এমন ছবিই দেখা যাবে জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় রি-এজেন্ট সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই সমস্যা হচ্ছে। প্রকাশ্যে অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন কর্তৃপক্ষ।
জঙ্গলমহলে একমাত্র ঝাড়গ্রাম সরকারি হাসপাতালে সিসিইউ ইউনিট রয়েছে। আর কোনও বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে সিসিইউ নেই। ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৮টি ব্লক তো বটেই, পাশের বাঁকুড়া জেলার রাইপুর ব্লক এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পূর্ব সিংভূম জেলার বহু মানুষ এখানে চিকিৎসার জন্য আসেন। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে এসে খোদ মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন, গরিব মানুষজন যাতে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে উপযুক্ত পরিষেবা পান। কিন্তু তারপরও চূড়ান্ত গয়ংগচ্ছ ভাবে চলছে হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগটি।
নিজের মনে গজগজ করছিলেন বেলপাহাড়ির কুনারাম মাণ্ডি। হাসপাতালে তাঁর এক আত্মীয়ার চিকিৎসা চলছে। রক্তের সুগার পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন। কুনারামবাবুর কথায়, “এ কেমন সরকারি জেলা হাসপাতাল? যেখানে সামান্য রক্তের সুগার পরীক্ষাটুকুও হয় না!” ঝাড়খণ্ডের পূর্ণপানি গ্রামের মংলু মারাণ্ডি, বাঁকুড়ার রাইপুরের বেলমণি বাস্কের মতো রোগীর পরিজনরাও প্রশ্ন তুলেছেন, “সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের সুগার, ইউরিয়া, ক্রিটেনিন-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা গুলি বাইরের প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে কেন করে আনতে হবে? তাহলে কীসের জন্য সরকারি হাসপাতাল?
অভিযোগ, মঙ্গল-বৃহস্পতি-শনি মাত্র তিনদিন হাসপাতালে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি (ইউএসজি) করা হয়। ফলে, সব চেয়ে সমস্যায় পড়েন আউটডোরের রোগীরা। কারণ, আউটডোরে প্রতি সপ্তাহের ওই তিনটি দিনে সর্বোচ্চ দশ জন করে মোট ৩০ জনের ইউএসজি করা হয়। আউটডোরে ইউএসজি করানোর জন্য রোগীদের ভিড়টা বেশিই হয়। গড়ে দেড়-দু’মাস পরে পরীক্ষার দিন ধার্য করা হয় বলে অভিযোগ। এর ফলে অনেক রোগীই বাইরে থেকে ইউএসজি করাতে বাধ্য হন। হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিত্সকের একটি বেসরকারি নির্ণয় কেন্দ্র রয়েছে। বেসরকারি নির্ণয় কেন্দ্রে পরীক্ষা করানোর জন্য অবশ্য রোগীদের অপেক্ষা করতে হয় না। জঙ্গলমহলের গুরুত্বপূর্ণ এই সরকারি জেলা হাসপাতালে বিকেলের পরে আর ইসিজি হয় না। রাতে চিকিৎসাধীন রোগীদের ইসিজি করার প্রয়োজন হলে কোনও ব্যবস্থা নেই। তখনও ভরসা সেই বাইরের নির্ণয় কেন্দ্র।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, একলব্য স্কুলের মতো ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের দায়িত্বও রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেওয়া প্রয়োজন। না হলে হাসপাতালের রোগ সারবে না। সম্প্রতি বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ-সহ সন্ন্যাসীরা হাসপাতাল পরিদর্শন করে যাওয়ার পরে আশায় বুক বাঁধছেন এলাকাবাসী।
ঝাড়গ্রামের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনীকুমার মাঝি বলেন, “সাধ্যমতো পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সমস্যার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”