তৈরি হচ্ছে মেরিন ড্রাইভ। নিজস্ব চিত্র
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে চলেছে। আরব সাগরের তীরের মুম্বইয়ের ধাঁচে এক টুকরো মেরিন ড্রাইভের স্বাদ শীঘ্রই পেতে চলেছেন এ রাজ্যের পর্যটকেরা। দিঘা বেড়াতে গেলে কাঁথি থেকে সমুদ্রের জলরাশি দেখতে দেখতে সাগর কিনারের ওই রাস্তা ধরে পর্যটকেরা সেখানে পৌঁছে যাবেন। আগামী মে মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক সফরে পূর্ব মেদিনীপুরে আসবেন। তার আগে তাঁর স্বপ্নের মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পের বাকি থাকা কাজটুকু শেষ করতে মরিয়া প্রশাসনিক আধিকারিকেরা।
২০১৫ সালে দিঘা থেকে কাঁথি পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ তৈরির প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন মমতা। নাম দিয়েছিলেন ‘সৈকত সরণি’। তা বানাতে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য। সমুদ্র বাঁধের উপর দিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। শঙ্করপুর থেকে তাজপুর এবং মন্দারমণি থেকে শৌলা পর্যন্ত সৈকত সরণির নির্মাণের কাজ কিছুটা বাকি। সে কাজ সম্পূর্ণ করতে জোর কদমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ‘দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ’। ঘূর্ণিঝড়ে একবার শঙ্করপুর থেকে জলধা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার বাঁধের রাস্তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সেখানে সেচ দফতর বাঁধ দ্রুততার সঙ্গে মেরামতি করছে। অন্যদিকে, মন্দারমণির একাংশে বাকি রয়েছে রাস্তা তৈরির কাজ। তবে শঙ্করপুর মৎস্য বন্দর, তাজপুর সৈকত লাগোয়া জলধা এবং কাঁথির শৌলাতে তিনটি সেতু তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে পূর্ত দফতর (হাইওয়ে)। তিনটি সেতুর মধ্যে ন্যায়কালী সেতু এবং অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ ইতিমধ্যে পুরোপুরি সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। জেলা পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (হাইওয়ে) অনুপ মাইতি বলেন, “ন্যায়কালী সেতুর কাজ শেষ। জলধা এবং শৌলার সেতুগুলির প্রায় ৮০ ভাগ কাজ হয়ে গেছে। বাকি কাজ জুনের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।”
আপাতত ন্যায়কালী মন্দিরের পার্শ্ববর্তী সেতু পেরিয়ে পর্যটক এবং স্থানীয়েরা মোটরবাইক ও গাড়ি চেপে সমুদ্রের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছে যাচ্ছেন শঙ্করপুর পর্যন্ত। সেতু তিনটি বাদ দিয়ে গোটা মেরিন ড্রাইভের ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা তৈরির কাজ করে ফেলেছে ‘দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ’। এ ব্যাপারে ডিএসডিএ-র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মানস কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘দ্রুত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য চেষ্টা চলছে।’’
উল্লেখ্য, গত এক দশকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে সেজেছে দিঘা। এখন ‘সৈকত সরণি তৈরি হলে তা দিঘা, শঙ্করপুর, তাজপুর, মন্দারমণির পর্যটনের মানকে অনেকটা এগিয়ে দেবে। পাশাপাশি, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সংলগ্ন এলাকাবাসীর জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে বলে আশা জেলা প্রশাসনের। এমনিতেই, দিঘায় রোপওয়ে, টয় ট্রেন, কুমির পার্ক, চিড়িয়াখানা থেকে বিনোদনের নানা সম্ভার তৈরি করার প্রস্তুতি চলছে। এর পর দিঘা থেকে মন্দারমণি প্রায় ৩০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই মেরিন ড্রাইভ চালু হয়ে গেলে সমুদ্র তীরবর্তী বিস্তীর্ণ পর্যটন কেন্দ্রের বাণিজ্য অনেকটাই প্রাণ ফিরে পাবে বলে মনে করছেন এলাকার ব্যবসায়ীরাও।