নিত্য-যন্ত্রণা। পাঁশকুড়ায়।
প্রচারে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বার সাংসদ হওয়ার পরে কথা রাখলেন দেব। ঘাটালের সাংসদ দেব সম্প্রতি লোকসভায় পাঁশকুড়ায় উড়ালপুল তৈরির বিষয়টি তুলে ধরেন। জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করতে রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে চিঠিও লিখেছেন অভিনেতা সাংসদ। আর তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূল নেতারা যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে প্রচার করতে শুরু করেছেন, সেখানে বিরোধীরা বিঁধতে ছাড়ছে না। বাম-বিজেপি দুই শিবিরেরই কটাক্ষ, রাজ্য চাইলেই উড়ালপুল তৈরি করবে রেল। তাই প্রচার না করে উড়ালপুল তৈরিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক সরকার।
দেড় যুগ আগে পুরসভা হয়েছে পাঁশকুড়া। পুর-পরিষেবা নিয়ে শহরবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। বেহাল রাস্তাঘাটের পাশাপাশি শহরের গতি আটকেছে পাঁশকুড়া লেভেল ক্রসিংয়ে। শহরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, পাঁশকুড়া স্টেশনের অদূরে লেভেল ক্রসিংয়ের উপর তৈরি হোক উড়ালপুল। পাঁশকুড়া লেভেল ক্রসিংয়ের গেট দিনের অধিকাংশ সময় পড়ে থাকে বলে অভিযোগ। পাঁশকুড়া জংশন স্টেশন হওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এই শাখা দিয়ে দিনে গড়ে চারশোরও বেশি ট্রেন চলাচল করে। এই লেভেল ক্রসিংয়ের উত্তরে রয়েছে পাঁশকুড়া বনমালী কলেজ, একাধিক শিক্ষক শিক্ষণ কলেজ ও ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের মেচগ্রাম মোড়। দক্ষিণে পাঁশকুড়া স্টেশন,পাঁশকুড়া কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন বাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। দিনের ব্যস্ত সময়ে এই লেভেল ক্রসিংয়ের দু’দিকে লম্বা লাইন পড়ে যায়। ফলে, ভোগান্তির অন্ত থাকে না।
প্রতিটি নির্বাচনের সময় প্রচারে উঠে আসে পাঁশকুড়ায় উড়ালপুলের দাবি। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় উড়ালপুল যে জরুরি তা মানছে রেল ও পুরসভা উভয়পক্ষই। তবে উড়ালপুল নির্মাণের দায় রেলের উপর চাপাচ্ছে পুরসভা। পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, রেলের সদিচ্ছার অভাবেই তৈরি হয়নি উড়ালপুল। যদিও গত ২৯ জানুয়ারি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার পি এস মিশ্র পাঁশকুড়া স্টেশন পরিদর্শনে এসে বলেছিলেন, ‘‘রাজ্য ৫০ শতাংশ টাকা দিলেই উড়ালপুল তৈরি করা যাবে।’’ সেই সময় রেলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, পাঁশকুড়ায় লেভেল ক্রসিং তৈরির জন্য জায়গা চিহ্নিত হয়েছে। এ বার উদ্যোগ নেওয়ার পালা রাজ্যের।
বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের পুরসভা বা রাজ্য সরকার কেউই এ বিষয়ে উদ্যোগী না হয়ে শুধু রেলের উপর দায় চাপাচ্ছে। পাঁশকুড়ার বর্ষীয়ান সিপিআই নেতা চিত্তরঞ্জন দাশঠাকুর বলেন, ‘‘পাঁশকুড়া উড়ালপুল নিয়ে আমি বাম আমলেও অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তখনও রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়নি। তৃণমূল আমলেও রাজ্যের উদ্যোগ নজরে পড়ছে না।’’ এ ক্ষেত্রে রাজ্যের গড়িমসিকে দুষছে বিজেপিও। পাঁশকুড়া পুরসভার বিরোধী নেতা সিন্টু সেনাপতি বলেন, ‘‘উড়ালপুল তৈরিতে রেল আগেই সম্মতি দিয়েছে। রাজ্য তা নিয়ে রাজনীতি করছে। রাজ্যের সদিচ্ছা থাকলে অনেক আগেই উড়ালপুল হত।’’
পাল্টা রেলকে দুষছেন পাঁশকুড়ার পুরপ্রধান নন্দকুমার মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘উড়ালপুল তৈরির বিষয়ে রেল পুরোপুরি উদাসীন। রেল সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই রাজ্য এগোবে। রেলের সম্মতি আদায়েই আমাদের সাংসদ দেব রেলমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন।’’ দেবের সাংসদ প্রতিনিধি অলোক আচার্যের বক্তব্য, ‘‘পাঁশকুড়ায় উড়ালপুল নির্মাণের বিষয়টি সংসদে বক্তৃতায় তুলে ধরার পাশাপাশি রেলমন্ত্রীকেও চিঠি লিখেছেন ঘাটালের সাংসদ। রেলের ছাড়পত্র আদায়ে উনি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন।’’