Amphan

কাঁটা আমপান, সাগর মেলায় ঘাটতি হোগলার

প্রতি বছর কার্তিক মাস থেকে কোলাঘাটের নগুরিয়া গ্রামের মানুষজন ব্যস্ত হয়ে পড়েন হোগলা পাতার চাদর তৈরি করতে।

Advertisement

দিগন্ত মান্না

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৫২
Share:

হোগলা পাঠানোর কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র।

গত মে মাসে তাণ্ডব চালায় আমপান। ব্যাপক ক্ষতি হয় রূপনারায়ণের চরে জন্মানো হোগলা ঘাসের। ফি বছর সাগর মেলায় পুণ্যার্থীদের জন্য হোগলা ঘাসের যে অস্থায়ী ছাউনি তৈরি হয় তার জন্য সিংহভাগ হোগলা যায় কোলাঘাট থেকে। আমপানের জেরে এ বার হোগলার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। করোনার জন্য এবার পুণ্যার্থী ছাউনিগুলিকে হোগলার দেওয়াল দিয়ে আালাদা করে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ফলে অন্য বারের তুলনায় এ বার হোগলার চাহিদাও বেড়েছে। অথচ আমপানের ক্ষতির জেরে হোগলা জোগাড় করতে কালঘাম ছুটছে ব্যবসায়ীদের।

Advertisement

প্রতি বছর কার্তিক মাস থেকে কোলাঘাটের নগুরিয়া গ্রামের মানুষজন ব্যস্ত হয়ে পড়েন হোগলা পাতার চাদর তৈরি করতে। মূলত তমলুক ব্লক এলাকার রূপনারায়ণের চরে জন্মায় হোগলা ঘাস। কার্তিক মাসের প্রথম দিকে কেটে ফেলা হয় ঘাসগুলি।এরপর সেগুলি কিনে আনেন নগুরিয়া গ্রামের হোগলা ব্যবসায়ীরা। কাঁচা হোগলা কেটে রোদে ভাল করে শুকোতে হয়। এরপর প্রয়োজন মতো আকৃতি অনুযায়ী সেগুলি কাটা হয়। তারপর সুতলি দড়ির সাহায্যে এক একটি হোগলা ঘাসকে জুড়ে তৈরি করা হয় হোগলার চাদর। সাধারণত দুটি আকৃতির চাদর তৈরি করেন কারিগররা। একটি সাড়ে ৯ ফুট বাই ৬ ফুট। অন্যটি সাড়ে ৭ ফুট বাই ৫ ফুট।নগুরিয়া গ্রামের প্রায় তিনশো বাসিন্দা হোগলা চাদর তৈরির কাজ করেন। মকর সংক্রান্তির আগে সেগুলি নৌকোয় করে পাড়ি দেয় গঙ্গাসাগরের উদ্দেশ্যে। নগুরিয়া গ্রামের বিশ্বজিৎ আদক, গোপাল কারক, প্রদীপ আদকেরা পৈতৃক সূত্রে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। কার্তিক মাস থেকে পৌষ এই তিন মাস ধরে কোলাঘাটের রাইন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নগুরিয়া গ্রামের মানুষজন হোগলার চাদর তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। কাজ অনুযায়ী দৈনিক ১০০ থেকে ২০০ টাকা মজুরি জোটে।

কিন্তু এ বার আমপানের ধাক্কা হোগলা ব্যবসাতেও। আমপানের জেরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে রূপনারায়ণের চরে জন্মানো হোগলার। করোনার জন্য এ বার আদৌ গঙ্গাসাগর মেলা হবে কিনা তা নিয়েও ছিল সংশয়। ফলে আগে থেকে বেশি করে হোগলা মজুত করে রাখেননি ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি গঙ্গাসাগর মেলা হওয়ার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রশাসন সূত্রে খবর এবার করোনার জন্য পুণ্যার্থীদের ছাউনিগুলিকে হোগলার দেওয়াল দিয়ে আলাদা করে ছোট ছোট কক্ষের রূপ দেওয়া হচ্ছে। ফলে হোগলার চাহিদা এবার এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। গত বছর সাগর মেলায় চাউনি তৈরির জন্য লেগেছিল প্রায় পঞ্চাশ হাজার হোগলার চাদর। হোগলা ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এবার হোগলার চাদর লাগছে প্রায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি। কোলাঘাটের হোগলা ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ আদক বলেন, ‘‘আমপানে রূপনারায়ণের চরে হোগলা ঘাসের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। এতদিন কোলাঘাটের হোগলাতেই সাগর মেলার সমস্ত ছাউনি তৈরি হয়ে যেত। এ বার হোগলার জন্য হাওড়া জেলার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।’’

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement