নিখোঁজদের বাড়িতে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র
এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। বুলবুলের সময় সমুদ্রের মাছ ধরতে গিয়ে এখনও নিখোঁজ জেলার দুই মৎস্যজীবী। উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তায় দিন কাটছিল কাঁথি-৩ ব্লকের ওই দুই মৎস্যজীবীর পরিবারের। সেই উদ্বেগ আরও বেড়েছে শুক্রবার সকালে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন তাঁদের জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুই মৎস্যজীবীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। দেহ শনাক্ত করতে এ দিন পড়শি জেলার রায়দিঘিতে গিয়েছেন ওই দুই মৎস্যজীবীর পরিজন।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি থেকে একটি ট্রলার মাছ ধরতে গিয়ে ফেরার পথে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। সাত মৎস্যজীবী নিখোঁজ হন। পরে তিন জনকে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে অন্যতম তপন গিরি কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের আউরাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। আপাতত দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা থানায় রয়েছেন।
বাকি নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন লাউদা গ্রাম পঞ্চায়েতের শিল্লিবাড়ি গ্রামে চন্দন দাস এবং জগুদাসবাড় গ্রামের বাসিন্দা শম্ভু দাস। দুই পরিবারের লোকেদের দাবি, গত ৯ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল শুরু হওয়ার পর থেকে শম্ভু এবং চন্দনের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। ছেলের খোঁজ না পেয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে শিল্লিবাড়ি গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধা সুজি দাসের। শবর পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছেলে চন্দন ভাইফোঁটার পরের দিন রায়দিঘি চলে গিয়েছিলেন। তাঁর মা সুজি বলেন, ‘‘গত মঙ্গলবার ট্রলারের মাঝির মারফত ছেলে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু এখন কি অবস্থায় রয়েছে ওরা, তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। চিন্তায় কয়েকদিন নাওয়াখাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, চন্দনের এক ছেলে মুক, আরেক ছেলে নাবালক। মাছ ধরতে গিয়ে তাদের বাবা এমন বিপদে পড়বেন, তা তারা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি। চন্দনের বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে থাকেন শম্ভুর পরিজন। তাঁর স্ত্রী বাসন্তীর কথায়, ‘‘স্বামীর কিছু হয়ে গেলে কি নিয়ে বাঁচব! মাছ ধরেই কোনও রকমে সংসার চলত।’’
ওই দুই মৎস্যজীবী পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজৈনিতক তরজা। প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে নিখোঁজ হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গত কয়েকদিন ধরে ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি বলে অভিযোগ। গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম মৎস্যজীবী পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সিপিএমের একটি প্রতিনিধি দল। যার নেতৃত্বে ছিলেন জেলা সিপিএমের সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি। তাঁর দাবি, ‘‘এলাকায় তৃণমূল ক্ষমতায়। তা সত্ত্বেও শবর এবং ধীবর সম্প্রদায়ের এই দুই পরিবারের পাশে কেউ এসে দাঁড়ায়নি। আমরাই প্রথম ওই দুই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি।’’
বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা ওই পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পরে শুক্রবার চন্দনের পরিবারের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেন স্থানীয় তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী কৃষ্ণা দাস। এর পরেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বাম নেতা নিরঞ্জন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যেখানে হেলিকপ্টার নিয়ে ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় ঘুরছেন, সেখানে এরকম গরীব মৎস্যজীবীদের নিখোঁজ থাকার খবর পাওয়া সত্ত্বেও তাঁদের পরিবারের পাশে রাজ্য সরকার কিংবা তার দলের কেউ গুরুত্ব দেয়নি।’’
নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য বলছেন, ‘‘জেলার দু-জন মৎস্যজীবী নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের যে কোন অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে ওই সব মৎস্যজীবী পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি এবং বিধায়কদের বলা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ একেবারেই মিথ্যে।’’