অরণ্যসপ্তাহের উদ্বোধনে পুলিশ কর্মীর হাতে গাছের চারা তুলে দিচ্ছেন জেলাশাসক। মঙ্গলবার এগরায়। নিজস্ব চিত্র
আমপানে এ বার জেলায় নষ্ট হয়েছে বেশ কয়েক হাজার গাছ। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতির কারণে জেলার নার্সারিগুলিও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এরই মাঝে মঙ্গলবার ঘটা করে সূচনা হল অরণ্য সপ্তাহের। উদ্দেশ্য বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা। অন্যান্য বছর এই উপলক্ষে চারা জোগানের জন্য সরকারি ক্ষেত্র ছাড়াও বেসরকারি ক্ষেত্রে বিভিন্ন নার্সারি থেকেও চারা কেনার ব্যবস্থা ছিল। তবে এ বার পরিস্থিতি ভিন্ন আমপানের ক্ষত পূরণে জেলায় আগে চেয়ে গাছের চারা লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে। কিন্তু সেই প্রেক্ষিতে তাঁদের কাছে সরকারি বরাত তেমন আসেনি বলে অভিযোগ বেসরকারি নার্সারি মালিকদের। সে ক্ষেত্রে আমপানে গাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা আদৌ পূরণ করা যাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বন দফতরের সরকারি হিসেবেই জেলা জুড়ে প্রায় ৫০ হাজার গাছ ভেঙেছে আমপানে। ক্ষতির অংশের মধ্যে বেশিরভাগটাই হয়েছে হলদিয়া মহাকুমায়। বনদফতর সূত্রের খবর, অরণ্য সপ্তাহে জেলায় ৬ লক্ষ ৫০ হাজার গাছের চারা বিতরণ করার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। স্বভাবতই, বেসরকারি ক্ষেত্র ছাড়াও রাজ্য সরকার বেশি মাত্রায় বনসৃজনে উদ্যোগী হবে ভেবেই কিছুটা নিশ্চিন্তে ছিলেন নার্সারি মালিকরা। কিন্তু তাঁদের আশায় জল ঢেলেছে করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়তে থাকা এবং তার কারণে লকডাউন। ১৪ থেকে ২০ জুলাই অরণ্যসপ্তাহ হলেও জনকল্যাণ মূলক বেশিরভাগ অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছে। এ ছাড়াও বাতিলের মুখে সমস্ত রকম সামাজিক অনুষ্ঠান।
আমপানে জেলার উপকূল এলাকায় ১৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক গাছ ভেঙেছিল। এ ছাড়া কয়েক হাজার ছোট গাছও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন দফতর সূত্রে খবর, অরণ্য সপ্তাহ উপলক্ষে কাঁথি-১ ব্লকের বিরামপুরে ২২ হেক্টর, শঙ্করপুর মোহনা ও তাজপুরে ১০ হেক্টর জমিতে হেক্টর পিছু ১৬০০টি করে ঝাউ গাছ লাগানো হবে। তা ছাড়া, জুনপুট এবং শঙ্করপুরে ২০ হেক্টর জমিতে দেড় লক্ষ ম্যানগ্রোভ লাগানো হবে। কাঁথি-১ ব্লকের বাদলপুর পঞ্চায়েত এলাকায় ৯ হেক্টর এবং দেশপ্রাণ ব্লকের দারিয়াপুর পঞ্চায়েত এলাকায় হেক্টর পিছু ৬২৫টি চারা রোপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কাঁথি মহকুমা বন আধিকারিক প্রদীপ কুমার সেন। তবে যে সব গাছ লাগানো হচ্ছে, তার সবটাই তাদের নিজস্ব নার্সারিতে তৈরি বলে বনদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের আদাবেড়িয়া গ্রামের নার্সারি মালিক বিজয় দাস বলেন, ‘‘আগের চেয়ে চারা বিক্রি অনেক কমে গিয়েছে। গাড়ি চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় কিছু চারা রফতানি করা যাচ্ছে। তবে সরকারি বরাত সে ভাবে মেলেনি।’’
অন্নপ্রাশন, বিয়ে, জন্মদিনেও গাছের চারা দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে বনসৃজন কর্মসূচি পালন করা হত। শিল্প সংস্থাগুলিও সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকল্পে গাছের চারা বিতরণ করত। কিন্তু সবকিছুতেই জল ঢেলেছে করোনা। ফলে কপাল পুড়েছে নার্সারি মালিকজদের। হলদিয়ার সুতাহাটার এক নার্সারি মালিক অকুল দেব বলেন, ‘‘এ বছর আমপানে বহু গাছ নষ্ট হওয়ায় অনেক চারার বরাত পাব ভেবে লাভের আশা করেছিলাম। কিন্তু করোনা সে সবে জল ঢেলে দিল। যতটা চারা বিক্রি হবে আশা ছিল তার সিকিভাগও হয়নি। তার উপর সরকারি বরাত নেই বললেই চলে।’’
জেলা বনাধিকারিক স্বাগতা দাস বলেন, ‘‘নতুন করে বনসৃজনের জন্য খোলা দরপত্র চাওয়া হয়েছিল। যে সব নার্সারি তাতে সাড়া দিয়েছেন, চারা জোগানের জন্য তাদের মধ্যে থেকেই বেছে নেওয়া হয়েছে।’’
এ দিকে এগরায় সাত দিনের জেলা বনমহোৎসব কর্মসূচির মঙ্গলবার উদ্বোধন করেন জেলা শাসক পার্থ ঘোষ। অনুষ্ঠানে করোনা পুলিশ কর্মী, চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের চারা গাছ দিয়ে সংবর্ধনা দেন জেলা সভাধিপতি ও জেলা পুলিশের আধিকারিকেরা। অনুষ্ঠানে জেলা জুড়ে ২৫ লক্ষ চারা রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে জেলা বনবিভাগ ও জেলা পরিষদের বন ও ভূমি দফতর।