ত্রিপল পাওয়ার পরে। শুক্রবার তমলুকে। নিজস্ব চিত্র
আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মাথা গোঁজার ঠাঁই। বাড়ি মেরামতের আগে অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য একখানা ত্রিপলের আশায় আবেদন করেছিলেন পুরকর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু সেই ত্রিপল হাতে এল আমপান চলে যাওয়ার প্রায় এক মাস পাঁচদিন পরে।
আমপানে তমলুক শহরের ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশকে ত্রিপল দিয়েছিল পুরসভা। কিন্তু তারপরেও ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশ সরকারি ত্রিপল পাননি বলে অভিযোগ তোলেন। ত্রিপল না পেয়ে বিক্ষোভেও সামিল হন তাঁরা। আর এরপর প্রশাসনের নির্দেশে ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দার কাছ থেকে আবেদন জমা নেয় পুরসভা। প্রায় ৪৫০টি আবেদন জমা পড়েছিল। তারপর মহকুমা প্রশাসনের তরফে তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির তালিকা তৈরি করে দ্বিতীয় দফায় ত্রিপল বিলির জন্য পুরসভাকে ত্রিপল বরাদ্দ করা হয়েছে।
প্রশাসন ও পুরসভা সূত্রের খবর, আবেদনের ভিত্তিতে তদন্তের পর দ্বিতীয়দফায় ৩৫০টি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির জন্য ত্রিপল বরাদ্দ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ওয়ার্ড ভিত্তিক তালিকা পুরসভায় টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকা ধরেই শুক্রবার প্রথমদিনে পুরসভার ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল বিলি হয়েছে। শনিবার বেলা ১১টা থেকে ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল বিলি করা হবে।
কিন্তু সরকারি ত্রিপল পেতে এতদিন অপেক্ষা নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠেছে। আমপানের পর গত একমাসে জেলায় বেশ কয়েকবার ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির বাসিন্দাদের দুর্বিষহ অবস্থায় কাটাতে হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশ বাধ্য হয়ে নিজেরাই ত্রিপল কেনেন। এ দিন পুরসভায় ত্রিপল নিতে আসা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জান্নাতুল বিবি বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ে বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় খুবই অসুবিধায় ছিলাম। ঝড়ের পরের দিনই পুরসভায় এসেছিলাম ত্রিপলের জন্য। কিন্তু পাইনি। মাঝে ঝড়-বৃষ্টিতে বাড়ির জিনিসপত্র ও ব্যাঙ্কের কাগজপত্র জলে ভিজে নষ্ট হয়েছে। ত্রিপলের জন্য আবেদনের পর এতদিনে পেলাম। আরও আগে পেলে ওগুলো বাঁচত।’’
বিজেপি’র তমলুক নগর মণ্ডল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ বেরার অভিযোগ, ‘‘আমপানের পরে পুরসভা তদন্ত না করেই ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল বিলি করায় বহু প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সরকারি ত্রিপল পায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের নিয়ে আন্দোলন এবং মহকুমা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পরে তদন্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ত্রিপল বিলি করা হচ্ছে। পুর কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশের
হায়রানি হয়েছে।’’
অভিযোগ উড়িয়ে তমলুক পুরসভার প্রশাসক রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের আগে প্রায় ৮০০টি ত্রিপল দেওয়া হয়েছিল। তারপরেও যাঁরা আবেদন করেছিলেন প্রশাসন তদন্ত করে তালিকা তৈরি করে ত্রিপল বরাদ্দ করেছে। এতে পুরসভার কোনও গাফিলতি নেই।’’