Coronavirus Lockdown

‘অপ্রস্তুত’ শিল্প শহরেই অর্ধেক মৃত্যু

ঝড়ের গতিপথের পূর্বাভাস অনুসারে জেলার সবচেয়ে ক্ষতি  হওয়ার সম্ভাবনা ছিল নন্দীগ্রামে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৪:০০
Share:

উপড়ে গিয়েছে গাছ, হলদিয়া বন্দর আবাসনে (উপরে)। —নিজস্ব চিত্র

একটি ভায়বহ ঘূর্ণিঝড়। জেলায় তার বলি ৬। যার মধ্যে চার জনেই হলদিয়া মহকুমা এলাকার বাসিন্দা।

Advertisement

বুধবার দুপুরের পরে স্থলভাগে প্রবেশ করেছিল ‘আমপান’। বন্দর শহর হলদিয়া তার তাণ্ডব চলেছে। তাতে ঘরবাড়ি ভাঙা, গাছ ভাঙার পাশাপাশি, হলদিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ডের দু’জন, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের একজন এবং হলদিয়া ব্লকের দেউলপোতাতের এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে।

ঝড়ের গতিপথের পূর্বাভাস অনুসারে জেলার সবচেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল নন্দীগ্রামে। সেই মতো সেখানে প্রচুর ক্ষতিও হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর ওই এলাকায় পাওয়া যায়নি। সে তুলনায় হলদিয়া যে ক্ষয়ক্ষতি এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তাতে অবাক শহরবাসীর একাংশ। কিন্তু হলদিয়ায় এত প্রাণহানি কেন? প্রশাসনের তরফে কি তা হলে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া ছিল না!

Advertisement

হলদিয়া পুরসভা সূত্রের খবর, ১ নম্বর ওয়ার্ডের মহম্মদপুরে মৃত রঞ্জিত সিংহ এবং প্রসেনজিৎ সিংহ এবং তাঁর পরিবারের আরও দুই সদস্যকে বেলা ১টা নাগাদ প্রশাসনের তরফে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সাড়ে ৩টে নাগাদ পরিবারের চার সদস্য খাওয়াদাওয়া করার জন্য ফের নিজেদের বাড়ি চলে যান। তখনই শুরু হয় ‘আমপানে’র তাণ্ডবে তাঁদের বাড়িতে একটি গাছ পড়ে যায়। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের রামগোপালচক এলাকার খালপাড়ে মৃত্যু হয়েছে অলোক মাইতি (৩৫) নামে এক ব্যক্তির। অলোক আদতে নন্দীগ্রামের বাসিন্দা। কর্মসূত্রে পরিবারের সঙ্গে হলদিয়ায় থাকতে। ঝড়ের আশঙ্কায় পরিবারের সবাইকে ত্রাণ শিবিরে পাঠিয়ে দিলেও তিনি নিজে কাঁচা বাড়িতে ছিলেন। অন্য মৃত তপন দাস (৪৭) দেউলপোতার বাসিন্দা ছিলেন।

পুরপ্রধান শ্যামলকুমার আদক বলেন, ‘‘প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বহু লোক নিজেদের কাঁচা বাড়ি থেকে ত্রাণ শিবিরে যাননি। তাঁরাই বিপদে পড়েছেন। হলদিয়া মহাকুমায় প্রায় ২২ হাজার ঝুপড়ি বাড়ি উড়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

মৃত্যুর পাশাপাশি, ঝড়ের প্রভাব পড়লে শিল্প সংস্থাগুলিতে। ছোট-বড় সমস্ত সংস্থাই কমবেশি ওই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর। রেনুকা সুগার মিল নামে একটি কারখানার বয়লারের চিমনি এবং গুদাম ভেঙে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার দাবি, তাদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে ঝড়ে। রেনুকা সুগারের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিমল সারেঙ্গী বলেন, ‘‘আমপানের তাণ্ডবে বয়লারের চিমনি এবং গুদাম-সহ অন্য যন্ত্রের ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার ধাক্কা।’’ প্রায় একই অবস্থা আদানী-সহ অন্য ছোট-বড় শিল্প সংস্থাগুলিরও। হলদিয়ার পুরপ্রধানের কথায়, ‘‘অনেক শিল্প সংস্থার ক্ষতি হয়েছে বলে শুনেছি। তবে প্রশাসন শিল্প সংস্থাগুলির পাশে রয়েছে।’’

হলদিয়া বন্দর সূত্রের খবর, ৫ এবং ৯ নম্বর বার্থে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্দরের ‘ভেসেল ট্র্যাফিক ম্যানেজিং সিস্টেম’ (ভিটিএমএস) রয়েছে দাদনপাত্র বাড় এবং সাগরদ্বীপে। সেগুলি সম্পূর্ণভাবে বসে গিয়েছে। ওই পদ্ধতির দ্বারা সিগনালিং করা হয়। স্বভাবতই কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তবে বিকল্প পদ্ধতি ‘অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম’ (এআইএস) দিয়ে বর্তমানে কাজ চালানো হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন হয়েছে হলদিয়া-কলকাতা বন্দর টেলিফোন যোগাযোগ। মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতে হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বন্দরের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু হয়েছে।

এ দিন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের জোয়ারে দু’টি জাহাজকে বন্দর থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে খবর। বন্দর চত্বরে প্রায় এক হাজারটি গাছ ভেঙে পড়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এ দিন সেই সমস্ত গাছগুলি কেটে এলাকা পরিষ্কার করার কাজ চালাচ্ছেন। পোর্ট হ্যান্ডলিং এবং জাহাজ চলাচলেও এ দিন কোনও সমস্যা হচ্ছে না বলে বন্দর সূত্রে খবর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement