COVID-19

সকালে বাজারে ভিড়, পরে ধরপাকড়

মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মলয় রায়ের দাবি, ‘‘নির্দিষ্ট সময় মেনেই দোকানগুলি খোলা ছিল।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

ঝাড়গ্রাম ও বীরভূম শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২১ ০৭:৪০
Share:

সন্ধ্যা-সাড়ে-৬টা: ঝাড়গ্রাম পাঁচ মাথার মোড়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

রবিবার থেকে কার্যত লকডাউন শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামেও। কড়াকড়ি শুরু হয়েছে বিধিনিষেধ। বিধি মেনে এ দিন সকালে নির্দিষ্ট সময়ে দোকান-বাজার খুলেছে মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ঝাড়গ্রাম শহরে। সকালের দিকে বেশিরভাগ বাজারে ভিড়ও ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই শিকেয় ওঠে দূরত্ববিধি। অনেকে দিব্যি মাস্ক থুতনিতে রেখেই ঘোরাফেরা করেছেন বাজারে। মেদিনীপুর শহরে পুলিশ- প্রশাসনের নজরদারিও তেমন ছিল না। খড়্গপুর, ঝাড়গ্রামে সকাল সাড়ে দশটাতেও দোকান ছিল খোলা। পরে পুলিশ পথে নামে। ঝাঁপ পড়ে দোকানের। রাস্তা হয় শুনশান। অটো-টোটোয় সে ভাবে ছিল না। রেলশহরে এক বেলায় পুলিশি অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে ৬৭জন।

Advertisement

মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মলয় রায়ের দাবি, ‘‘নির্দিষ্ট সময় মেনেই দোকানগুলি খোলা ছিল।’’ তবে বাস্তবে সকালের দিকে আনাজ এবং মাছ বাজারের উপচে পড়া ভিড়ও অসচেতন, অসতর্ক ছিল। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, করোনা সংক্রমণে রাশ টানতে গেলে ভিড়ে লাগাম টানতেই হবে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের প্রফেসর তথা ফিজিশিয়ান কৃপাসিন্ধু গাঁতাইতের মতে, ‘‘বাজারের ভিড়ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ক্রেতা, বিক্রেতা সকলকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। না হলে সমস্যা।’’ জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গীও বলেন, ‘‘যে ভাবেই হোক ভিড় এড়াতে হবে। তবেই সংক্রমণ কমবে।’’

কার্যত লকডাউন শুরুর প্রথম দিনে মেদিনীপুরে বাজারের ভিড়টাই যা ‘বেঠিক’ ছিল। বাকি সব কিছু অবশ্য এ দিন ঠিকঠাক ছিল। শহর, শহরতলিতে কার্যত লকডাউনের ছবিই চোখে পড়েছে বেলা গড়াতে। ব্লক-সদরেও তাই। মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড সকাল থেকে ছিল পুরো শুনশান। সার দিয়ে দাঁড়িয়েছিল একের পর এক বাস। ভোরের দিকে বেশ কয়েকজন এসেছিলেন খড়্গপুর-সহ কয়েকটি রুটের বাসের খোঁজে। বাস চলবে না জেনে তাঁরা ফিরে গিয়েছেন। বাসকর্মীরা মানছেন, ‘‘কয়েকজন যাত্রী এসেছিলেন। জিজ্ঞেস করেছেন, কোনও বাস যাবে কি না। যাবে না জেনে ফিরে গিয়েছেন তাঁরা।’’ এক বাসকর্মীর কথায়, ‘‘পরিবহণ বন্ধ মানে সবই বন্ধ। আরেকটু পরিকল্পনা করে করলে ভাল হত। গরিব মানুষ সমস্যায় পড়ে গেলেন।’’ সকালে দোকান- বাজার খোলা থাকায় পথে লোকজন ছিল। বেলা গড়াতে রাস্তাঘাটও শুনশান হয়ে পড়ে। ফিরে এসেছে গত বছরের স্মৃতি।

Advertisement

খড়্গপুর শহরে কড়াকড়ির প্রথম দিনেই সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছে পুলিশকে। খোদ খড়্গপুরের এসডিপিও-র নেতৃত্বে শহর জুড়ে সকাল থেকে অভিযান চলে। সকালেই মাস্ক ছাড়া পথচলতি বহু মানুষকে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। সকাল ৭টা থেকে বাজার খুলতেই অবশ্য শহরের গোলবাজার, ইন্দা, কৌশল্যা থেকে খরিদা বাজারে উপচে পড়েছিল ভিড়। গা ঘেঁষাঘেষি করে চলে কেনাকাটা। বেলা ১০টাতেও বাজার-দোকান বন্ধ না হওয়ায় পথে নামে পুলিশ।

সাড়ে দশটা থেকে শহরের গোলবাজার, ইন্দা, মালঞ্চ, খরিদা, বোগদা এলাকায় চলে অভিযান। গোলবাজার, বাসস্ট্যান্ড এলাকার বেশ কয়েকজন দোকানি ও অকারণে পথে ঘোরাফেরা করা মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বোগদা, গোলবাজারে জমা মাদক, মদের আসরে হানা দিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে মহামারি প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা মনীশ চক্রবর্তী বলছিলেন, “এর আগে এত সক্রিয় দেখিনি পুলিশকে।” বেলা ১টার পরে অবশ্য প্রয়োজন ছাড়া পথে লোকজনের দেখা মেলেনি। বিক্ষিপ্তভাবে স্টেশন থেকে আসা যাত্রীরা টোটোয় উঠেছেন। তবে বিভিন্ন গলিপথে চলেছে দেদার আড্ডা। খড়্গপুরের এসডিপিও দীপক সরকার বলেন, “মাস্ক ছাড়া যাঁরা পথে বেরিয়েছিল তেমন অনেককে সকাল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর নির্দিষ্ট সময়ের পরে দোকান খুলে রাখায় কয়েকজন দোকানিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৬৭জন গ্রেফতার হয়েছে। এই অভিযান ধারাবাহিকভাবে চলবে।”

রবিবার গড়বেতায় সাপ্তাহিক হাট বসে। ভোর থেকেই রাধানগর, গড়বেতা, খড়কুশমার আনাজ বাজারে ভিড় বাড়তে থাকে। একসময় হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। চন্দ্রকোনা রোডে বাসস্ট্যান্ডের সামনে মাছ ও আনাজ বাজারেও ভিড় উপচে পড়ে। অনেকে বেশি করে আনাজ, মাছ, ডিম কেনেন। গোয়ালতোড়ের হুমগড়, পিংবনি, গোয়ালতোড় বাজারেও সকালে প্রচুর ভিড় ছিল। গড়বেতার বাজারে আনাজ নিয়ে বসা বিভূতি দোলই, অমর মাইতিরা বলেন, "বস্তা ভর্তি ঝিঙে, পটল প্রথম দিকে ভালই বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ১০টা বাজলেই উঠে যেতে হয়েছে।’’ চন্দ্রকোনা রোড, গোয়ালতোড়ের অনেক জায়গায় পুলিশ পথে নামলে তড়িঘড়ি দোকান বন্ধের হিড়িক পড়ে। দুটি থানা এলাকায় পুলিশের টহল চলে দিনভর। গড়বেতায় নির্দিষ্ট সময়ের পরেও দোকান খোলা রাখায় ৭ জনকে আটক করে পুলিশ। বেলা বাড়লে মিষ্টির দোকান খোলা হলেও খদ্দের ছিল না। গড়বেতার মিষ্টি দোকানের মালিক বাসুদেব দে বলেন, ‘‘দোকান খুললেও বিক্রিবাটা তেমন নেই।’’

এ দিন সকাল থেকে ঝাড়গ্রাম শহরের বিভিন্ন বাজারেও ভিড় ছিল। বিশেষ করে মাংসের দোকানে ভিড় ছিল তুলনায় বেশি। দশটার পর দোকান বন্ধ করতে পথে নামে পুলিশ। আনাজ বাজারে দোকান বন্ধের জন্য সাদা পোশাকের পুলিশ লাঠি হাতে নেমেছিল। তবে বেলা বাড়ার পর একেবারে শুনশান হয়ে যায় প্রতিটি এলাকা। বেলিয়াবেড়া থানার আইসি সুদীপ পালোধী রান্টুয়া বাজারে অভিযানে ছিলেন। অযথা যাঁরা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, তাঁদের বাড়ি পাঠানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement