সরাসরি ‘ভিক্ষার দান’ বলতে চাইছে না মহিলা সংগঠন। —নিজস্ব চিত্র।
লক্ষ্মীর ভান্ডারের পাল্টা মহিলাদের স্থায়ী অর্থনৈতিক সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস।
ভোটে জিততে তৃণমূলের অন্যতম হাতিয়ার লক্ষ্মীর ভান্ডারকে বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ করেছে বামেরা। দাবি করেছে, এটা কখনও স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। এ বার সিপিআইয়ের মহিলা সংগঠনের রাজ্য সম্মেলনেও উঠে আসবে সেই প্রসঙ্গ। তবে সংবেদনশীল এই বিষয়কে সরাসরি ‘ভিক্ষার দান’ বলতে চাইছে না ওই মহিলা সংগঠন। তাদের মতে, লক্ষ্মীর ভান্ডার চলুক। তবে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তৈরি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে আরও সক্রিয় করে অর্থনৈতিক সাহায্য করলে গ্রামাঞ্চলে মহিলাদের স্থায়ী অর্থনৈতিক সুবিধা ও সমাধান হতে পারে। অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করেন, মানুষের হাতে (বিশেষ করে মহিলাদের হাতে) সরাসরি অর্থ পৌঁছে দিলে তা উন্নয়নে সহায়ক হয়। বিভিন্ন ধরনের ভাতা উন্নত দেশগুলিতেও রয়েছে। তাই লক্ষ্মীর ভান্ডারকে সেই চোখেই দেখা উচিত। এটাও আসলে মহিলাদের স্বনির্ভরতারই হাতিয়ার।
৩০ নভেম্বর ও ১ ডিসেম্বর সিপিআইয়ের মহিলা সংগঠন—‘পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতি’র ২৭ তম রাজ্য সম্মেলন হবে ঝাড়গ্রাম শহরে। ‘অনুদানে সাময়িক স্বস্তি নয়, স্থায়ী সমাধানে সব হাতে কাজ চাই, সব পাতে ভাত চাই’ এমনই স্লোগান উঠবে সেখানে। এই পাল্টা মত তৈরি করে কি তৃণমূলের মহিলা ভোট ব্যাঙ্কে ফাটল ধরানো যাবে? সিপিআইয়ের রাজ্য কমিটির সদস্য দেবজ্যোতি ঘোষ বলছেন, ‘‘অন্যান্য রাজ্যেও মহিলাদের অনুদান দেওয়া হচ্ছে। এই অনুদানের ফলে একাংশ উপভোক্তা বিচার বুদ্ধি, স্বাধীন ভাবনাচিন্তা, মত প্রকাশের অধিকার কার্যত হারাতে বসেছেন। পরিবারের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁদেরও এ বার নতুন করে ভাবতে হবে। উদ্যোগটা ‘সিন্ধুতে বিন্দুবৎ’ হলেও আমাদের রাজ্যস্তরীয় মহিলা সংগঠন সেই বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাইছে।’’
পর পর নির্বাচনের ফলে রাজ্যে তৃণমূলের জয়যাত্রা অব্যাহত। তৃণমূলের দাবি, লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুফলের কারণেই রাজ্যের দলমত নির্বিশেষে মহিলা ভোট তাদের পক্ষে সংগঠিত। ঝাড়গ্রাম জেলায় মাঝে ভোট কমলেও সেটি ফিরিয়ে আনতে পেরেছে তারা। বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনের ফল তার প্রমাণ। সে ক্ষেত্রেও লক্ষ্মীর ভান্ডারের ভূমিকা রয়েছে বলেই মনে করে ওয়াকিবহাল মহল। ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের সেই মহিলা ভোট ব্যাঙ্কেই ফাটল ধরাতে চাইছে বিরোধীরা। এমন আবহে সিপিআইয়ের মহিলা সংগঠনটির রাজ্য সম্মলনের জন্য জঙ্গলমহলের কেন্দ্রভূমি প্রান্তিক জেলা ঝাড়গ্রামকে বেছে নেওয়ার বিষয়টিও তাৎপর্যপূর্ণ। এই প্রথম তাদের রাজ্য সম্মেলন হচ্ছে ঝাড়গ্রামে। ওই সংগঠনটির ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক রিতা দত্তগুপ্ত বলছেন, জঙ্গলমহলে কাজের অভাবে বহু নারী-পুরুষ পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে বাইরে কাজ করছেন। অথচ স্বনিযুক্তি প্রকল্প আরও শক্তিশালী হলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে।’’
সম্মেলন উপলক্ষে ওই মহিলা সংগঠনের পক্ষ থেকে ঝাড়গ্রাম শহরের নামকরণ করা হয়েছে ‘ইলা মিত্র নগর’। ইলা ছিলেন তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী। সম্মেলনটি হবে অরণ্যশহরের দেবেন্দ্রমোহন মঞ্চে। সেটির নামকরণ করা হয়েছে শেফালি ভট্টাচার্য মঞ্চ। সংগঠনের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক ছিলেন শেফালি ভট্টাচার্য। এ ছাড়াও শহরের রাস্তায় প্রাক্তন সাংসদ গীতা মুখোপাধ্যায়, ঝাড়গ্রাম জেলায় কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সুকুমার ঘোষ সহ প্রয়াত নেতা-নেত্রীদের নামাঙ্কিত সম্মলনের ১৬টি তোরণ তৈরি করা হয়েছে। ৩০ নভেম্বর শনিবার সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন সিপিআইয়ের সর্বভারতীয় মহিলা সংগঠন ভারতীয় মহিলা জাতীয় ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক দীপ্তি ভারতী। ওই সংগঠনেরই অনুমোদিত হল পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতি। সংগঠনের ঝাড়গ্রাম জেলা সভানেত্রী ছবি দাস হলেন ১৮টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট ঝাড়গ্রাম পুরসভার একমাত্র বিরোধী পুরপ্রতিনিধি (কাউন্সিলর)। ছবি বলছেন, ‘‘সরকারি পরিষেবা সবার প্রাপ্য। তাই লক্ষ্মীর ভান্ডারকে আমরা কখনই ভোট ভিক্ষার অনুসঙ্গ বলছি না। যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁদের কখনই বলছি না, নেবেন না। অনুদান নিন কিন্তু নিজের পরিবারের ভবিষ্যৎ ভেবে নির্বাচনের সময় সিদ্ধান্ত নিন।’’
বামেদের এমন কৌশলকে অবশ্য গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূল। ঝাড়গ্রাম জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী নিয়তি মাহাতোর দাবি, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার মহিলাদের আর্থিক নিরাপত্তা দিয়েছে। যেটা এতদিন কেউ ভাবেনি সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভেবেছেন। এখন অনেকেই তাঁকে অনুকরণ করার চেষ্টা করছেন।’’ তিনি জুড়েছেন, ‘‘বামেরা যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কথা বলছে, তাকেও বিভিন্ন ভাবে অনুদান দিয়ে, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়ে নতুন করে অক্সিজেন দিয়েছে মা-মাটি-মানুষের সরকার। তাই বাংলার মহিলারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন।’’