—প্রতীকী চিত্র।
খুন এবং অন্যান্য গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত এমন অনেকেই তৃণমূল ও বিজেপির হয়ে পঞ্চায়েতে প্রার্থী। একই অপরাধে অভিযুক্ত দুই দলের নেতা-কর্মীরাও ভোটের ময়দানে দাপিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছেন। অথচ সব দেখেও পুলিশের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছে বামেরা।
সিপিএমের দাবি, পুরোটাই শাসক দলের গটআপ গেম। নন্দীগ্রামের মাটিতে যাতে বামেরা ফিরে আসতে না পারে তাই প্রশাসনের মদতেই দু'পক্ষের অপরাধীদের ছেড়ে রেখেছে পুলিশ। যাতে দুই দলই এলাকায় সন্ত্রাস, ভোট লুট করতে পারে। নন্দীগ্রামের এক বাম নেতার অভিযোগ, ‘‘২০০৭ সালে তথাকথিত ভূমি আন্দোলনের নামে ও পরবর্তী সময়ে নানা অজুহাতে বামপন্থীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, লুটপাট চালানো এবং বামপন্থী কর্মী যাঁরা নন্দীগ্রামে শিল্পের জন্য লড়াই করেছিলেন তাঁদের খুন করার নেতৃত্ব দিয়েছিল যারা তাদেরই কেউ আজ প্রার্থী, কেউ নেতা।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী সুষ্ঠু ও অবাধ, শান্তিপূর্ণ ভোটের স্বার্থে যাদের জেলে থাকা দরকার তাদের ছেড়ে রেখেছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, পুলিশি পাহারায় তাদের মনোনয়ন জমা দিতে দেখা গিয়েছে। এরা বিজেপি ও তৃণমূল উভয় দলেই রয়েছে। এই পরিবেশে কী ভাবে অবাধ ভোট সম্ভব? কমিশন কি নিরপেক্ষ?"
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জুন মাসে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নন্দীগ্রামের কিছু মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয় হলদিয়া মহকুমা আদালতে। সব কিছু খতিয়ে দেখে আদালত তা অনুমোদন করে। কিন্তু ২০২১ সালে ফেব্রুয়ারিতে ওই অনুমোদন চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যান বিজেপির আইনজীবী। হাইকোর্ট সেই মামলা পুনরায় করার নির্দেশ দেন।
আইনজীবী সূত্রে খবর, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের মুখে অপরাধীদের বিরদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে হলদিয়া মহকুমা আদালত। এর মধ্যে কেবলমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট হওয়ার দরুন শেখ সুফিয়ানের গ্রেফতারে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বাকিদের গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল রয়েছে। এদের মধ্যে শেখ সাহাবুদ্দিন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী, শেখ সামসুল ইসলাম তৃণমূলের হয়ে জেলা পরিষদ ও স্বদেশরঞ্জন দাস অধিকারী বিজেপির হয়ে পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়াও বিজেপির অশোক করণ, সরোজ ভুঁইয়ার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘আমি জেলার ডিএসপি, নন্দীগ্রামের আইসি’কে আবেদন করেছিলাম যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে তাদের গ্রেফতারের জন্য। কিন্তু কেউই কর্নপাত করেননি। আসলে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে গটগাপ চলছে। নন্দীগ্রামের মাটিতে ওরা বামপন্থীদের আটকাতে মরিয়া।’’
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘নির্বাচনে হালে পানি না পেয়ে সিপিএম এই সব বাহানা তৈরি করছে। আইন আইনের পথে চলবে। এগুলো সবই মিথ্যে মামলা করা হয়েছিল।’’ তৃণমূলের আইনজীবী সেলের পক্ষে আইনজীবী শেখ মনসুর আলম বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের আবেদনে মামলাগুলি কলিকাতা হাইকোর্টে বিচারাধীন।’’ আর তৃণমূলের প্রার্থী শেখ শামসুল ইসলাম বলছেন, ‘‘গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে জানি। আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছি।"