করোনা সচেতনতার প্রচারে দিবাকর। নিজস্ব চিত্র।
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আবহেও মাস্কের পরোয়া করছেন না অনেকেই। হাটে বাজারে মাত্রাছাড়া ভিড়ে দূরত্ব বিধি মানছেন না অনেকে। করোনা ঠেকাতে তাই ব্যক্তিগত খরচে জনতাকে মাস্ক পরাচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের দিবাকর আলু।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের মানুষ অবশ্য দিবাকরকে চেনেন মনে প্রাণে বামপন্থী হিসেবেই। ভোট এলেই সাইকেলের প্যাডেল ঠেলে চোঙা হাতে এতদিন তাঁকে বেরিয়ে পড়তে দেখেছেন এলাকাবাসী। মুখে থাকত স্লোগান—‘ভোট দিন বাঁচতে, তারা হাতুড়ি কাস্তে’। কিন্তু সেই স্লোগান এ বার বদলেছে। করোনা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে দাসপুরের রাজনগরের এই প্রবীণ বাম নেতা এখন হাট-বাজারে ঘুরে ঘুরে হাঁকছেন, ‘করোনা থেকে বাঁচতে মুখ হবে ঢাকতে’। সোমবার সেই প্রচারে এক বেলায় অন্তত শ’খানেক মাস্ক বিলি করেছেন দিবাকর। পুরোটাই ব্যক্তিগত খরচে।
গত কয়েক দিনে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের করোনা সংক্রমণের হার বে়ড়েছে অনেকটাই। সচেতনতা বাড়াতে দাসপুরের বাজার কমিটি, হাট কমিটির সঙ্গে দিনকয়েক আগে বৈঠকও করে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। করোনা বিধি যাতে অক্ষরে অক্ষরে মানা হয়, সে ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয় কমিটিগুলিকে। তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। একই রকম গা-ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। দিবাকরবাবুর কথায়, ‘‘বেশি বার বললে যদি কাজ হয়, তাতে তো সমস্যার কিছু নেই। আমি তাই বার বার বলছি। আমাকে পুলিশ প্রশাসনের তরফে কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। বরং সাহায্যই করা হয়েছে।’’ তবে একই সঙ্গে করোনা রোধে রাজ্য এবং কেন্দ্রের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দিবাকর।
অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক দিবাকর ছাত্রাবস্থা থেকেই বামপন্থী। ভোটের সময় সাইকেলে চোঙা হাতে বামেদের হয়ে প্রচার করে এসেছেন বরাবর। কালে ক্রমে বাহন বদলেছে। এখন সঙ্গী বাইক। চোঙার সঙ্গে জুড়েছে আধুনিক মাইক্রোফোন। আর এ বার বদলাল প্রচারের অভিমুখও। দলের হয়ে প্রচার ছেড়ে হঠাৎ জনস্বার্থে প্রচার কেন? দিবাকর বললেন, ‘‘দলের নির্দেশেই আমি এ কাজ করছি।’’ তবে মাস্ক থেকে মাইক—খরচ সবই নিজের। এক এলাকাবাসী অবশ্য বলছেন, ‘‘আপাদমস্তক বামপন্থী দিবাকর দলের ঊর্ধ্বে উঠে নিজের প্রচারে নারাজ। তবে তিনি যা করছেন তা প্রশংসনীয়।’’