Couple Arrested for Murder

কিশোর খুনে দম্পতি ধৃত

সৌরভ মরে গিয়েছে ভেবে তার দেহ লোপাটের পরিকল্পনা করে দম্পতি। সেই মতো কিশোরের মুখে কাপড় বেঁধে ও হাত পা মুড়ে বাজার করা ব্যাগের ভিতরে ঢোকানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পটাশপুর শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ১০:০৪
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

ধান জমিতে বাজারের থলের মধ্যে কিশোর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় আটক দম্পতিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তাদের দাবি, জেরায় ওই দম্পতি খুনের কথা স্বীকার করেছে। চুরির ‘অপরাধের সাজা’ দিতেই তারা ওই কিশোরকে মারধর করে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। আর তার জেরেই কিশোরের মৃত্যু হয়। পরে কার্যত ঠান্ডা মাথায় দেহ লোপাট করে মেদিনীপুরে গিয়ে চিকিৎসক দেখিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিল ওই দম্পতি।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের খুড়শি পঞ্চায়েতের দক্ষিণ পলাশী এলাকা থেকে শনিবার সকালে উদ্ধার হয়েছিল এক কিশোরের দেহ। জানা যায়, মৃত কিশোর পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর এলাকার বাসিন্দা সৌরভ সেনাপতি (১২)। নৈপুর গ্রামে তার বাড়ি। শুক্রবার থেকে সে নিখোঁজ ছিল। এমন অবস্থায় তার দেহ উদ্ধারের ঘটনায় অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পটাশপুর। সৌরভের এক প্রতিবেশী দম্পতি অভিজিৎ রায় ও অম্বিকা রায় ওই কিশোরের মৃত্যুতে জড়িত দাবি করে স্থানীয়েরা তাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। পুলিশ প্রথমে তাদের আটক করে। পরে কিশোরের খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শনিবার গভীর রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

স্থানীয় সূত্রের খবর, অভিজিৎ এবং অম্বিকাদের পুরনো বাড়ি মাধবপুর গ্রামে। টিউশন করা সুবাদে প্রেম করে অম্বিকার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল অভিজিতের। পরে তারা বিয়ে করে। বাবার সঙ্গে ঝামেলা করে অভিজিৎ নৈপুরে শ্বশুরের কেনা একটি বাড়িতে চলে আসে পরে। সেখানে প্রায় দেড় দশকের বেশি সময় ধরে বসবাস করছে তারা। মৃত কিশোরের পরিবারের সঙ্গে আগে একাধিক ঝামেলা হয়েছে ওই দম্পতির। এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় ওই দম্পতি জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুরে তাদের বাড়িতে জিনিসপত্র চুরি করতে এসেছিল সৌরভ। ধরা পড়ার ভয়ে সে দোতলার ঘরে খাটের নীচে লুকিয়ে ছিল। পরে অবশ্য তাকে ধরে ফেলে দম্পতি। অভিযোগ, সৌরভকে তারা লাঠি, কাঠের বাটাম দিয়ে মারধর করে এবং তাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই বাড়িতে আটকে রাখে। ওই দম্পতি পুলিশে জানিয়েছে, শনিবার সকালে সৌরভকে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ ওই কিশোর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নেয়। রাগে ফের কিশোরকে মারধর করা হয়। অভিযোগ, সে সময় অভিজিৎ ওই কিশোরের বা’গালে সজোরে চড় মারেন। ওই অবস্থায় সে পালিয়ে যাওয়ার সময় সিঁড়ি থেকে পড়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে যায়।

সৌরভ মরে গিয়েছে ভেবে তার দেহ লোপাটের পরিকল্পনা করে দম্পতি। সেই মতো কিশোরের মুখে কাপড় বেঁধে ও হাত পা মুড়ে বাজার করা ব্যাগের ভিতরে ঢোকানো হয়। পরে ওই কিশোরের মৃত্যু হয় বলে দাবি। রবিবার অম্বিকাদের মেদিনীপুরে যাওয়ার কথা ছিল। তব শনিবার রাতেই তারা গাড়ির চালক এক আত্মীয়কে ডাকে এবং রাত সাড়ে ৩টা নাগাদ গাড়িতে করে ব্যাগ নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের দিকে রওনা হয়। পথে দশগ্রামে একটি ধানের জমিতে ব্যাগ ফেলে দেয়। ওই দিন মেদিনীপুরে গিয়ে চিকিৎসক দেখিয়ে সকাল ১০টা নাগাদ নৈপুরের বাড়িতেও ফেরে তারা।

ধৃত দম্পতিকে রবিবার কাঁথি আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ অভিযুক্ত গাড়ির চালকের খোঁজ করছে। খড়গপুরে ময়নাতদন্তের শেষে এ দিন ওই কিশোরের দেহ পটাশপুরে পৌঁছয়। তবে নতুন করে এলাকায় যাতে উত্তেজনা না ছড়ায়, সে জন্য বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় এ দিন। এগরার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক মহম্মদ বদিউজ্জামান বলেন, ‘‘কিশোরের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দম্পতিকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুন-সহ দেহ লোপাটের একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement