সমবায়ে আর্থিক দুর্নীতি, তদন্তে কমিটি

কোলাঘাটের পরমানন্দপুর সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে কৃষকদের ফসল বিমার টাকার একটা অংশ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল গত বছর। এ বছর অভিযোগ, সমিতির ম্যানেজার ২৪ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০০
Share:

একই সমবায় সমিতি। একই রকম আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ। মধ্যে সময়ের ব্যবধান এক বছর।

Advertisement

কোলাঘাটের পরমানন্দপুর সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে কৃষকদের ফসল বিমার টাকার একটা অংশ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল গত বছর। এ বছর অভিযোগ, সমিতির ম্যানেজার ২৪ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি জানাজানি হতেই তদন্তের দাবি করে ইতিমধ্যে পরমানন্দপুর সমবায় সমিতির সভাপতি পদত্যাগ করেছেন। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে সমবায় দফতর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে।

সমবায় সমিতির প্রাক্তন সভাপতি রমেশ পাত্র জানিয়েছেন, দিন পনেরো আগে একটি ছেলেকে আটকে রেখে পরমানন্দপুর সমবায় সমিতির ম্যানেজার সুপ্রকাশ পট্টনায়েক তাঁকে তাঁর কাছে যেতে বলেন। কারণ জানতে চাইলে ম্যানেজার রমেশকে ম্যানেজার জানান যে, তিনি ওই ছেলেটিকে সমবায় সমিতি থেকে ২৪ লক্ষ টাকা ঋণ দিয়েছিলেন। কিন্তু ছেলেটি তা ফেরত দেননি। রমেশের দাবি, তিনি পরে সুপ্রকাশের কাছে ঋণের নথি দেখতে চান। তাতে সুপ্রকাশ যে নথি দেখিয়েছিলেন, তা ভুয়ো বলে অভিযোগ ওঠে।

Advertisement

বিষয়টি বোর্ডের সদস্যের জানান রমেশ। তাঁর অভিযোগ, এত বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির ব্যাপারে পরিচালন কমিটিকে জানানো হলেও তারা কোনও পদক্ষেপ করেনি। এর পরেই গত ২৭ নভেম্বর পরমানন্দপুর সমবায় সমিতির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন রমেশ। ঘটনার তদন্তের দাবিতে শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুর সমবায় দফতরের (রেঞ্জ ১) অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্টার, কোলাঘাট ব্লকের সমবায় পরিদর্শক এবং তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের জেলার সদর দফতরে চিঠি দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, রমেশ অভিযোগ করেছেন, ম্যানেজার সুপ্রকাশ গত কয়েক বছরে বিনা নথিতে ক্ষুদ্র ব্যবসা খাতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ দিয়েছেন। যার ৯৫ শতাংশই এখনও আদায় করা হয়নি।

রমেশ বলেন, ‘‘২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ম্যানেজার সুপ্রকাশ পট্টনায়েক বহু টাকা আত্মস্যাৎ করেছেন। অডিট রিপোর্টে তা উল্লেখ করা হয়নি। এই টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে বোর্ডকে জানানো হলেও কেউ আমার অভিযোগের গুরুত্ব দেননি। তাই নৈতিক কারণ পদত্যাগ করেছি। তদন্তের জন্য সমবায় দফতরের কাছে আবেদনও করেছি।’’

আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে শনিবার ওই সমবায়ের প্রায় ৫০ জন গ্রাহকও অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছেন কোলাঘাটের সমবায় পরিদর্শককে। আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ সামনে আসার পরেই সমবায় সমিতি থেকে নিজেদের টাকা তুলে নিতে শুরু করেন এলাকার বহু বাসিন্দা। এই পরিস্থিতিতে পরমানন্দপুর সমবায় সমিতি কর্তৃপক্ষ বোর্ড মিটিং ডাকেন। বৈঠকে ম্যানেজার ২৪ লক্ষ টাকা ধাপে ধাপে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মুচলেকা দেন বলে দাবি পরমানন্দপুর সমবায় কর্তৃপক্ষের। সমিতির সম্পাদক শশাঙ্ক ঘাঁটা বলেন, ‘‘ওই ম্যানেজার টাকা ফেরত দেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ওঁকে সমবায়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। আগামীদিনে সুপ্রকাশকে ম্যানেজার পদে রাখা হবে না। অন্য অনাদায় ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া চলছে।’’

তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে ফোন করা হয়েছেন সমিতির ম্যানেজার সুপ্রকাশকে। তবে তিনি ফোন ধরেননি। গোটা বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুর সমবায় দফতরের (রেঞ্জ ১) অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্টার হিরোজ মাইতি বলেন, ‘‘একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত করার জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে শনিবার। তদন্তকারীদের রিপোর্ট দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement