‘দাদু’কে সাহায্য সমরজিতের। নিজস্ব চিত্র
বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব মেরে কেটে দেড় কিলোমিটার। কখনও সাইকেলে, কখনও হেঁটে স্কুলে যেত বছর দশেকের সমরজিৎ। যাতায়াতের পথে দেখতে পেত রাস্তার ধারে অসহায় অবস্থা পড়ে থাকা প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ ‘দাদু’কে। লকডাউনে বাড়িতে থেকে রোজই টিভিতে দেখতে পেত মানুষের খাবার না পাওয়ার কষ্টের ছবি। তাই করোনা পরিস্থিতিতে নিজের স্কুল থেকে পাওয়া মিড ডে মিলের চাল, আলু ‘দাদু’র হাতে তুলে দিল সে।
রামনগর-১ ব্লকের নিমতলা হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সমরজিৎ। স্থানীয় গোবরা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা সমরজিতের এমন কাজ নিয়ে যথারীতি শোরগোল পড়েছে সমাজ মাধ্যমে। সমরজিতের বাবা পেশায় ধান ব্যবসায়ী শিবু পাত্র বলেন, ‘‘সোমবার ছেলের স্কুল থেকে মিড ডে মিলের চাল এবং আলু এনে বাড়িতে রেখেছিলাম। কিন্তু তারপর ছেলে যে কখন ওই সব জিনিস ওই বৃদ্ধকে দিয়ে এসেছে আমরা জানতাম না। পরে সে নিজেই বাড়িতে এসে বলে, ‘দাদু খুব কষ্টে ছিল। তাই ওঁকে খেতে দিয়ে এসেছি’।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিরামপুর এবং নিমতলার মধ্যবর্তী ফতেপুরের কাছে রাস্তার পাশে ঝুপড়ি একাই থাকেন ওই বৃদ্ধ। দু’পায়ে ভর দিয়ে হাঁটাচলা করতে পারেন না। এক সময় তালপাতার পাখা তৈরি করে বিক্রি করতেন। আপাতত স্থানীয়দের চা বিক্রি করে নিজের দুবেলার ভাত জোগাড় করতেন। কিন্তু লকডাউনে সবকিছুই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সমরজিতের স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু সরকার বলেন, ‘‘স্কুলে যাতায়াতের পথে রোজ ওই বৃদ্ধের অবস্থা দেখে সমরজিৎ নিজের মনকে আটকে রাখতে পারেনি। তাই সোমবার তার বাবা স্কুল থেকে যে চাল এবং আলু নিয়ে গিয়েছিলেন, সে সবই ওই বৃদ্ধকে দিয়ে গিয়েছে।’’
প্রতিবেশীদেরও মন জয় করেছে সমরজিতের এমন মানবিক কাজ। পঞ্চায়েতের প্রধান বিশ্বমুকুল দে বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধকে প্রতিবন্ধী ভাতা এবং লকডাউন চলাকালীন ত্রাণ দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে। তা সত্ত্বেও এলাকার একটি ছোট্ট ছেলে যে ভাবে নিজের মিড ডে মিলের চাল -আলু দিয়ে ওই বৃদ্ধের পাশে থেকেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।’’
কী বলছে সমরজিৎ!
তার কথায়, ‘‘দাদুর কেউ নেই। অনেকে ওকে চাল-ডাল দিয়ে আসত। এখন কী ভাবে খাবে, সেই ভেবেই স্কুল থেকে যে চাল-আলু পেয়েছিলাম, সবটাই ওকে দিয়ে দিই।’’