Coronavirus

কাজহারাদের ভিড়েই রেকর্ড

অনেকের কাজ যায়নি বটে কিন্তু আয় কমেছে।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২০ ০০:১০
Share:

নিয়মমতে: সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে, মাস্ক পরে চলছে একশো দিনের প্রকল্পে পুকুর পাড় সমতল করার কাজ। চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের জামিরা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

একশো দিনের কাজে নজির গড়ল চন্দ্রকোনার দু’টি ব্লক।

Advertisement

লকডাউন পর্বে ওই দুই ব্লক পিছু দিনে গড়ে ৩০-৩৫ হাজার শ্রমিক দৈনিক একশো দিনের কাজ করছেন। করোনা পরিস্থিতির আগে যাঁরা এই কাজ করতেন, তাঁদের বাইরেও বহু লোক এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন এখন। এটাকে সাফল্য হিসেবেই দেখছে জেলা প্রশাসন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, “লকডাউন পর্বে একশো দিনের প্রকল্পে চন্দ্রকোনার দু’টি ব্লক খুব ভাল কাজ করেছে। তাই তাদের অন্তর্বর্তী প্রকল্প তৈরির অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।” জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি অজিত মাইতিও জানান, লকডাউনের মধ্যে শ্রমদিবস বাড়াটা খুবই ইতিবাচক দিক।

চন্দ্রকোনার দুই ব্লকের বিডিও শাশ্বত প্রকাশ লাহিড়ী এবং অভিষেক মিশ্র জানান, নগদ টাকার সমস্যা মেটাতেই বেশি সংখ্যক পরিবারকে একশো দিনের কাজে যুক্ত করার পরিকল্পনা মাথায় এসেছিল তাঁদের।

Advertisement

সেই পরিকল্পনা সফল হল কী ভাবে? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, লকডাউনে অনেকে কাজ হারিয়েছেন। অনেকের কাজ যায়নি বটে কিন্তু আয় কমেছে। এছাড়া বেশিরভাগ পঞ্চায়েতে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরাই মূলত একশো দিনের কাজ পান বলে ‌অভিযোগ উঠে। বর্তমানে সেই তা নেই বললেই চলে। এখন একশো দিনের কাজে দৈনিক মজুরি ২০২ টাকা। সেটা পেতে দেরিও হচ্ছে না। এইসব কারণেই আগে আগ্রহ ছিল না, এমন অনেকেই পঞ্চায়েতে এসে কাজ চাইছেন। তাঁদের মধ্যে গৃহশিক্ষক যেমন রয়েছেন, তেমনই ছোট দোকানদার, মুদি দোকানের কর্মচারি, মুটে, পরিবহণকর্মী, পরিচারিকা, ফুল ব্যবসায়ী, টোটোচালক, হকার, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা, গ্যারাজ কর্মী, নির্মাণ কর্মীরাও রয়েছেন।

চন্দ্রকোনার লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা এক গৃহশিক্ষক বলেন, “হাতে একেবারে টাকা ছিল না। তাই একশো দিনের কাজে যাচ্ছি। নগদ টাকার খুবই প্রয়োজন।” ক্ষীরপাইয়ের জাড়ার বাসিন্দা মনোজ কাপাস নামে এক পরিবহণ কর্মীর কথায়, “এখন চাকা বন্ধ। তাই এই কাজে মন দিয়েছি।”

জেলা প্রশাসনের এক সূত্র মনে করিয়ে দিয়েছে, লকডাউনে রেশনের চাল-আটা মিললেও নগদ টাকায় টান দেখা গিয়েছে। এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই একশো দিনের কাজে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। তারই সুফল মিলছে ক্ষীরপাই ও চন্দ্রকোনা ব্লকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে ৩৮ হাজার ও চন্দ্রকোনা-২ ব্লকে ২৪ হাজার শ্রমিক একশো দিনের কাজ করেছেন। লকডাউনের আগে ক্ষীরপাই ও চন্দ্রকোনা ব্লক পিছু সাধারণত ১০-১২ হাজার পরিবার এই কাজ করতেন। সেটাই লকডাউন পর্বে বেড়ে হয়েছে গড়ে ১৬ থেকে ১৮ হাজার। এই সময়ের মধ্যে মোট শ্রম দিবসের হিসেবেও রেকর্ড করেছে এই দু’টি ব্লক। চন্দ্রকোনা-১ ব্লকে ৩ লক্ষ ২২ হাজার এবং চন্দ্রকোনা-২ ব্লকে ২ লক্ষ ৮৩ হাজার শ্রমদিবস ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এক সঙ্গে অনেক শ্রমিক কাজে নামছেন। এতে গুণগত মান যে সবসময় ভাল হচ্ছে, এমনটা নয়। কিন্তু কাজের বিনিময়ে সরকারি টাকা সাধারণের হাতে আসছে। এটাই সাফল্য। সরকারও এটাই চাইছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement