—ফাইল চিত্র
ফের করোনার ছায়া ঘাটালে। দাসপুরের গ্রামের পরে এ বার করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলল ঘাটাল শহরে। পেশায় অ্যাম্বুল্যান্স চালক ওই আক্রান্ত যুবকের বাড়ি ঘাটালের এক গ্রামে। তবে স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে তিনি ভাড়া থাকতেন শহরে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জানা যায়, ওই যুবকের করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, “ঘাটাল শহরের এক যুবকের করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ হয়েছে। ওই যুবককে পাঁশকুড়ার বড়মা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁর সূত্রে ঘাটাল হাসপাতালে কয়েকজন চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্য কর্মীকে সরকারি কোয়রান্টিনে পাঠানো হচ্ছে। মেদিনীপুরে আসার আগে ওই যুবক ঘাটালে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।” এ দিন রাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার নানা দাবিতে ঘাটাল হাসপাতালে নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের একাংশ বিক্ষোভও দেখান।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কয়েকদিন আগে জ্বর-সর্দি নিয়ে ঘাটাল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হন ওই যুবক। তার আগে মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন তিনি। উপসর্গ থাকায় গত সোমবার ঘাটাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে মেদিনীপুরের করোনা হাসপাতালে পাঠান। ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালকের করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসা মাত্র বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে ঘাটাল শহরে তুমুল তৎপরতা শুরু হয়েছে। জারি হয়েছে সর্বোচ্চ করোনা সতর্কতা। সিল করা হয়েছে নির্দিষ্ট এলাকা। আক্রান্ত যুবক কার কার সংস্পর্শে এসেছেন, কোথায় গিয়েছেন, তার খোঁজও শুরু করেছে পুলিশ-প্রশাসন। ঘাটাল মহকুমায় এই নিয়ে করোনা রোগী বেড়ে হল চার। এর আগে দাসপুরের গ্রামে একই পরিবারের তিনজন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন।
প্রশাসনের এক সূত্রের খবর, এ দিনই করোনা আক্রান্ত যুবকের স্ত্রী ও মা-কে মেদিনীপুর পাঠানো হয়েছে। যে বাড়িতে ওই যুবক ভাড়া ছিলেন, সেই বাড়ির ২৬ জনকে ঘাটাল স্টেডিয়াম ও একটি নার্সিংহোমের নিভৃতবাস কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালকের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সংস্পর্শে কারা এসেছেন, তার খোঁজে এখন হন্যে দশা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের। তিনি যে অ্যাম্বুল্যান্স চালাতেন, সেটি নিশ্চয়যান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। থাকত ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল চত্বরে। এতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। কারণ, নিশ্চয়যানে প্রসূতিরা যাতায়াত করেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানছেন, ‘‘ওই যুবক নিশ্চয়যানের চালক ছিলেন। তাঁর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সংস্পর্শে কারা এসেছেন, তার খোঁজ চলছে।’’
সূত্রের খবর, ঘাটালের বাসিন্দা, বছর বাইশের ওই যুবকের করোনার তেমন কোনও উপসর্গ ছিল না। খানিক জ্বর, কাশির উপসর্গ নিয়ে গত সোমবার তিনি ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ছিলেন হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে। পরদিন তাঁকে মেদিনীপুরের আবাসের কাছে থাকা করোনা হাসপাতালে (লেভেল- ১) স্থানান্তরিত করা হয়। সেই থেকে তিনি এখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ দিন তাঁর রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরে বিকেলে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ওই হাসপাতাল জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে।
এক সূত্রে খবর, লকডাউন পরিস্থিতিতে ওই যুবক অ্যাম্বুল্যান্সে ভিন্ রাজ্য থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসতেন। ঠিক কোথায় কোথায় তিনি গিয়েছিলেন, সেই খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন। সূত্রের খবর, গত ১৪ দিনে ওই অ্যাম্বুল্যান্সে করে কে কে যাতায়াত করেছেন, তার খোঁজ চলছে। চিহ্নিত হলেই তাঁদের সকলকে কোয়রান্টিন করা হবে। তাঁদের করোনা পরীক্ষাও করা হবে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক মানছেন, ‘‘ঘাটালের এই ঘটনায় উদ্বেগ আরও বাড়ল। কারণ, নিশ্চিতভাবে ওই অ্যাম্বুল্যান্সে এই ক’দিনে বেশ কয়েকজন যাতায়াত করেছেন। শুধু তো রোগী নন, সঙ্গে রোগীর পরিজনেরাও ছিলেন। এখন তাঁদের খোঁজ পাওয়াটা খুব জরুরি।’’