ঘটনাস্থলে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
কোয়রান্টিন কেন্দ্র হবে ব্লকে। সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। পশ্চিম মেদিনীপুরে অন্যত্র সমস্যা না হলেও কেশিয়াড়িতে কোয়রান্টিন কেন্দ্র গড়তে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হল প্রশাসনকে।
অভিযোগ, আদিবাসীদের একটি সংগঠনের মদতেই স্থানীয়দের একাংশ কেশিয়াড়ি পলিটেকনিকে কোয়রান্টিন কেন্দ্র খোলায় বাধা দিচ্ছেন। আলোচনাতেও সমাধান সূত্র মেলেনি। বাধার জেরে বিকল্প হিসেবে আপাতত কেশিয়াড়ি গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজকেই বেছে নিয়েছে প্রশাসন।
বেনাগেড়িয়ায় সিধো-কানহো-বীরসা পলিটেকনিকে ২০০ শয্যার কোয়রান্টিন কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা ছিল। জেলা প্রশাসন থেকে পরিদর্শনও হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছিল। বুধবার সন্ধ্যায় আদিবাসীদের বাধার বিষয়টি সামনে আসে। ঘটনাস্থলে যান বিডিও সৌগত রায়। সঙ্গে ছিল পুলিশ। অভিযোগ, আলোচনায় গিয়েও বাধা পেতে হয় প্রশাসনের দলকে। প্রশাসন সূত্রের খবর, স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন বাধা? বলা হয়, কিছু হলে নিজেদেরই সমস্যা হতে পারে। ব্লক প্রশাসনের এই বক্তব্যের উত্তরে স্থানীয়দের একাংশ জানান, কিছু হলে তাঁরা নিজেরাই বুঝে নেবেন। ফিরে যায় প্রশাসন। বৃহস্পতিবারও চলে বোঝানো। স্থানীয় বাসিন্দা সমায় মুর্মু বলেন, ‘‘কেন্দ্র করলে সংক্রমণ ছড়াবে। তার দায়িত্ব কে নেবে।’’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন বিধায়ক পরেশ মুর্মু। তবে সুরাহা হয়নি। বিকল্প হিসেবে কেশিয়াড়ি গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজকেই বাছা হয়েছে। প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, ভুল বোঝানো হচ্ছে আদিবাসীদের। স্থানীয় সূত্রের খবর, এতে আদিবাসীদের সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলে’র ইন্ধন রয়েছে। সমাজমাধ্যমে বিডিও নিজেই লেখেন, ‘কেশিয়াড়িতে এই সেন্টার না করতে পারলে একসময় সংক্রমণের সংখ্যা বাড়বে’। আবার লেখেন, ‘কেউ যদি মনে করেন প্রশাসনের কথা শুনব না তাহলে তাঁদের ঈশ্বর রক্ষা করুন’। এর পরে অনেকেই প্রতিবাদ জানান। পোস্ট করতে দেখা যায় কেশিয়াড়ির বাসিন্দা জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামনি মান্ডি, শিক্ষক প্রিয়দর্শী মুখোপাধ্যায়কে।
কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে?
বিডিও বলেন, ‘‘কলেজ কর্তৃপক্ষ নন, কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ বাধা দিচ্ছেন। তাঁদের দাবি, তাঁদের সঙ্গে এই বিষয়ে কেন আলোচনা করা হয়নি।’’ বিডিও যোগ করেন, ‘‘জাতীয় বিপর্যয়ের সময় তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করার কোনও যুক্তি নেই। এটা গ্রামের অনুষ্ঠান নয়।’’ ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের কেশিয়াড়ির নেতা চৈতন্য বাস্কে বলছেন, ‘‘বাধা পাওয়ার বিষয় নিয়ে ব্লক প্রশাসন আমাকে কিছু জানায়নি। সমস্যা হয়েছিল শুনেছি। হয়তো আদিবাসীদের সঙ্গে প্রশাসন আলোচনা করেনি। এই সেন্টার থেকে পাশাপাশি থাকা মানুষের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারে এই আতঙ্কে হয়তো বাধা দিচ্ছেন তাঁরা।’’
কোয়রান্টিন কেন্দ্র গড়তে বাধার বিষয়ে বিধায়ক পরেশ মুর্মুর সতর্ক প্রতিক্রিয়া, ‘‘আপাতত বোঝানোর চেষ্টা চলছে। এই রোগ নিয়ে আতঙ্ক থেকেই বাধাটা এসেছে। যদি না হয় বিকল্প হিসেবে কেশিয়াড়ি গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজকেই বাছা হয়েছে।"
আদিবাসীদের নিয়ে বৈঠকে বসার পরিকল্পনা করছেন বিধায়ক ও প্রশাসন। বিধায়কের আশা, বৈঠকের পর নিশ্চিত কাজ হবে।