প্রতীকী ছবি।
বেলাগাম করোনা সংক্রমণ। অধিকাংশ আক্রান্ত রয়েছেন গৃহ নিভৃতবাসে (হোম আইসোলেশনে)। অবশ্য ওষুধ, খাবারের প্রয়োজনে তাঁদের অনেকেরই পরিজন বেরোতে বাধ্য হচ্ছেন। হাটে-বাজারের ভিড়ে মিশে আশঙ্কা বাড়াচ্ছেন তাঁরা।
অথচ মাস্ক বাধ্যতামূলক করা ছাড়া গত বছরের যাবতীয় পদক্ষেপ শিকেয় উঠেছে। এখনও প্রশাসনিক উদ্যোগে সংক্রমিতদের বাড়ি বাড়ি প্রয়োজনীয় জিনিস পাঠানো হচ্ছে না। হচ্ছে না গণ্ডিবদ্ধ এলাকা। এমনকি নিজেদের পরিচয় গোপন করতে একাংশ করোনা আক্রান্ত স্বাস্থ্য দফতরে দিচ্ছেন ‘ভুয়ো’ নম্বর!
খড়্গপুরে শহরবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনিক ঢিলেমিতেই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের হার। গত বছরের শেষ পর্যায়েও কেউ করোনা আক্রান্ত হলে অন্তত তাঁর বাড়িটি গণ্ডিবদ্ধ হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছিল। স্থানীয় কাউন্সিলর, স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে খোঁজ নেওয়া চলছিল। দেওয়া হচ্ছিল প্রয়োজনীয় ওষুধ। কিন্তু এ বার কোথায় সমস্যা? খড়্গপুরের অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মধুমিতা বিশ্বাস বলেন, “এই কাজটি আয়ুষ মেডিক্যাল অফিসারেরা করেন। কিন্তু সত্যি বলতে গাড়ি না পাওয়ায় ওঁরা হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের কাছে যেতে পারছিল না। তবে দু’দিনের মধ্যেই যাবেন।” ফলে, বিধি ভাঙছেন সংক্রমিতেরা। যেমন দিন পাঁচেক আগে করোনায় আক্রান্ত হওয়া ঢেকিয়ার বাসিন্দা ঊনষাট বছরের এক রেলকর্মী বলছেন, “আমি পজ়িটিভ। স্ত্রী ও ছেলেও অসুস্থ। দু’বেলার খাবার হোম ডেলেভারি নিচ্ছি। কিন্তু ওষুধ ও জলখাবার আনতে ছেলেকে বেরোতেই হচ্ছে। সরকারি কোনও সাহায্য পাচ্ছি না।”
গত ২১এপ্রিল শহরের ডিভিসি এলাকার বাসিন্দা আইআইটির এক মহিলা নিরাপত্তাকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের বোনও বলেন, “সরকারি কোনও সাহায্য নেই। একটা ওষুধও দেওয়া হয়নি। আমাকে ওষুধ, খাবার সব পৌঁছে দিতে হচ্ছে।” ঘটনায় ক্ষুব্ধ অনেকেই। ভবানীপুরের বাসিন্দা বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত বছর তেতাল্লিশের এক আক্রান্ত বলছেন, “আমার বাড়ি ক্যানিংয়ে। এখানে স্ত্রীকে নিয়ে থাকি। সরকারিভাবে কোনও সাহায্য পাইনি। আমার এক সহকর্মী ছিল বলে বেঁচে আছি। চারদিন পরে স্বাস্থ্য দফতর থেকে ফোন করে বলছে কেমন আছেন! ভাবতে অবাক লাগছে।”
আক্রান্তদের একাংশ আবার নিজেদের আড়ালে রাখতে নমুনা দেওয়ার সময় ভুল ফোন নম্বর দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। যেমন, শহরের সুভাষপল্লির বছর পঁচিশের করোনা আক্রান্ত এক যুবতীর নম্বরে ফোন করলে ধরছেন পুরুলিয়ার গাড়ি চালক প্রদীপ গোস্বামী। আবার শ্রীকৃষ্ণপুরের বছর বাহান্নর আক্রান্তের নম্বরে ফোন করলে নম্বরটি ভুল বলে দাবি করছেন মছলন্দপুরের দেবেন সর্দার। সুভাষপল্লির বছর পঞ্চাশের আরেক করোনা আক্রান্তের দেওয়া নম্বরের ফোন ধরছেন দমদম ক্যান্টনমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শম্ভু চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “গত ১০দিন ধরে খড়্গপুর থেকে একাধিক ফোন এসেছে। এ ভাবে করোনা আক্রান্তরা অন্যের নম্বর দিয়ে গা ঢাকা দিয়ে ঘুরে বেড়ালে তো সর্বনাশ।”
গোটা বিষয়টি নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল বলছেন, “এখন তো আসলে হোম আইসোলেশন বা এলাকা গণ্ডিবদ্ধের নিয়ম সেভাবে নেই। আক্রান্তদের বাড়িতেই থাকতে বলা হচ্ছে। তবে ওষুধ না মেলার বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।” আর খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এলাকা গণ্ডিবদ্ধ করার বিষয়টি বিডিও অফিস থেকে জানালে আমরা করি। কিন্তু এমন কোনও নির্দেশ আমাদের কাছে নেই। আমরা বাইরে কেউ মাস্ক ছাড়া থাকলে গ্রেফতার করছি।”