প্রতীকী ছবি
পরিযায়ী শ্রমিকেরা ভিন্ রাজ্যে থেকে জেলায় ফিরলে বাড়তে পারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা— এই আশঙ্কা করেছিলেন স্বাস্থ্য দফতরেরই এক কর্মী-আধিকারিকেরা। তাঁদের আশঙ্কা সত্যি করে জেলায় খোঁজ মিলল আরও দুই করোনা আক্রান্তের। তমলুকের নিমতৌড়ি এবং পটাশপুর-২ ব্লক এলাকার ওই দুই বাসিন্দার মধ্যে এক জন পরিযায়ী শ্রমিক। সম্প্রতি তিনি ভিন্ রাজ্যে থেকে জেলায় ফিরেছিলেন। অন্য জনেরও ভিন্ রাজ্য ফেরতের যোগ রয়েছে।
তবে যে দিন নতুন করে দুই আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে, সে দিনই দেড় মাস চিকিৎসার পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন এক বছর আশির করোনা আক্রান্ত।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, নিমতৌড়ির সংলগ্ন এলাকার এক যুবক কাজের সূত্রে মুম্বইয়ে থাকতেন। ওই যুবক আরও পাঁচজনের সঙ্গে গাড়িতে করে সম্প্রতি বাড়ি ফেরেন। গত বৃহস্পতিবার আসানসোলের কাছে ঝাড়খণ্ড সীমান্ত পার হন তাঁরা। সে সময় তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। বাড়ি ফিরে ওই ছ’জন নিজেদের বাড়িতে নিভৃতাবাসে ছিলেন। শুক্রবার নিমতৌড়ি এলাকার ওই যুবকের করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। বাকি পাঁচজনের রিপোর্ট নেগেটিভ।
শুক্রবার রাতেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে ওই যুবককে বাড়ি থেকে পাঁশকুড়ার বড়মা করোনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শনিবার সকালে যুবকের পরিবারের চার সদস্য, গাড়ির চালক এবং খালাসিকে তমলুক জেলা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে।
আবার পটাশপুর-২ ব্লকের এক বৃদ্ধ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। বছর পঁয়ষট্টির ওক বৃদ্ধ জন্মসূত্রে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। ৩৫ বছর আগে বিবাহসূত্রে পটাশপুরে শ্বশুর বাড়িতে চলে আসেন। সেখানে একটি কাঠ চেরাই কারখানায় কাজ করতেন। তবে লকডাউনের আগে ওই বৃদ্ধ উত্তরপ্রদেশের বাড়িতে যান। সেখান থেকে যান দিল্লিতে আত্মীয়ের বাড়িতে। গত ১৭ মার্চ ওই বৃদ্ধের পরিবার, শ্যালক, পটাশপুরের এক প্রতিবেশী যুবক গাড়ি ভাড়া করে পটাশপুরে ফিরে আসেন। আসার পথে আসানসোলে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং লালারস নেওয়া হয়েছিল। শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য দফতর কাছে বৃদ্ধের করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট আসে।
এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা বৃদ্ধকে আনতে গেলে প্রাথমিক ভাবে বাধা দেন গ্রাম বাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, গ্রামবাসীদের নির্ধারিত ফাঁকা বাড়িতে কোয়রান্টিন সেন্টার করা হলেও বৃদ্ধর সিভিক ভলান্টিয়ার ছেলে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং থানার অনুমতি নিয়ে তাঁকে বাড়িতে রেখেছিলেন। এ নিয়ে গ্রামবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে পুলিশ গিয়ে গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে আক্রান্ত বৃদ্ধকে বড়মা হাসপাতালে নিয়ে যায়। আক্রান্ত বৃদ্ধের সিভিক ভলান্টিয়ার ছেলে, তাঁর স্ত্রী এবং শ্যলক এবং প্রতিবেশী যুবক মিলেয়ে মোট সাতজনকে চণ্ডীপুর করোনা হাসপাতালে আইসোলেশনে পাঠানো হয়। যে গাড়িতে তাঁরা পিরেছিলেন, সেই গাড়ির চালককে এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়। এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘দুজনকে করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট এসেছে। তাঁদের পাঁশকুড়া করোনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।’’
এই পরিস্থিতিতে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের এক করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছেন। ওই পান ব্যবসায়ী দেড় মাসের বেশি কলকাতা এবং বড়মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এদিন বিকেলে বৃদ্ধকে বড়মা হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘তমলুকের ওই বৃদ্ধ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন প্রায় দেড় মাস। পরিবারের লোকজনের আবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে পাঁশকুড়ার করোনা হাসপাতালে এনে ভর্তি করানো হয়েছিল। এখানে চিকিৎসার পর তাঁর দু’বার নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। শনিবার বৃদ্ধকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’’