প্রতীকী ছবি
অবশেষে করোনা যুদ্ধে জয়। একে একে বাড়ি ফিরলেন সকলে। দাসপুরের করোনা আক্রান্ত সেই পরিবারে বুধবার যেন ছিল পুনর্মিলন।
বাড়ি কোনও লোক করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে থাকলে কি আর মন মেজাজ ভাল থাকে। বিষয়টি আঁচ করেছিল পুলিশও। জেলার প্রথম করোনা আক্রান্ত দাসপুরের সেই যুবকের স্ত্রী মঙ্গলবার রাতেই বাড়ি ফিরছেন। কলকাতার বেলেঘাটা আইডি থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই পুলিশের তরফে ওই বাড়িতে দেওয়া হয়েছে মাংস, মিষ্টি আর ফল। বহুদিন পর পরিবারের সকলে মিলে একটু আয়েস করে খাওয়াদাওয়া হল এ দিন। প্রথমে বাড়ি ফিরেছিলেন আক্রান্ত যুবক। পরে ফিরেছিলেন তাঁর বাবা। মঙ্গলবার রাতে ফিরলেন যুবকের স্ত্রীও।
আরও একটা স্বস্তির খবর দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। ঘাটালে করোনা আক্রান্ত অ্যাম্বুল্যান্স চালক সূত্রে হাসপাতালের দুই চিকিৎসক- সহ নয় স্বাস্থ্যকর্মী এবং তিন অ্যাম্বুল্যান্স চালকের করোনা নেগেটিভ এসেছে। তবে চালক সূত্রে এ দিন আরও ১১ জনকে করোনা রিপোর্ট পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। দাসপুরেই প্রথম করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছিল। ধীরে ধীরে স্বাভাবিকের পথে যাচ্ছে সেই দাসপুর।
পুলিশ জানিয়েছে, দাসপুরের ওই পরিবারে করোনা আক্রান্ত তিনজন বাড়ি ফেরায় আর দাসপুরের ওই গ্রামে পুলিশের বাড়তি নজরদারি থাকবে না।লকডাউন মেনে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট গ্রামের বাসিন্দারা। আতঙ্ক ভুলে চেনা ছন্দে ফিরছে ওই গ্রামও। তবে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “দাসপুরে করোনা আক্রান্ত যুবকের স্ত্রী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে বাড়ি ফিরে এলেও এখনও সতর্ক থাকতে হবে। ১৪ দিন গৃহবন্দি থাকতে হবে তাঁদের।” দাসপুরের ওই পরিবারের আক্রান্ত যুবক বলেন, ‘‘গত একমাস বাড়ি ফাঁকা ছিল। পরিবারের উপর ঝড় বয়ে ছিলাম। আমাদের জন্য গোটা গ্রামকেই ঘরবন্দি থাকতে হয়েছিল। এতদিন পর সকলে একসঙ্গে হওয়ায় ভাল লাগছে।’’
ঘাটালে অ্যাম্বুলেন্স চালক সূত্রে দিন কয়েক আগেই চালকের স্ত্রী ও পরিবারের চার সদস্যের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল।বুধবার ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক,স্বাস্থ্য কর্মী সহ অ্যাম্বুলেন্স চালকের করোনা নেগেটিভ হওয়ার খবরে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে ঘাটাল শহরে।
পুলিশ সূত্রের খবর, অ্যাম্বুলেন্স চালকের সংস্পর্শে আসা ব্যাক্তিদের চিহ্নিত করে একেক করে হোম কোয়ারান্টিন করা হচ্ছে।এখনও অবধি ৫২ জনকে গৃহ পযবেক্ষণে রাখা হয়েছে।সরাসরি সংস্পর্শে আসা ব্যাক্তিদের চিহ্ণিত করে অনেককেই সরকারি নিভৃতবাসে এনে রাখা হচ্ছে।
ঘাটাল শহরে অ্যাম্বুল্যান্স চালকের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ার পর শহরের নির্দিষ্ট একটি ওয়ার্ড সিল করে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির বাইরে কাউকে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। ঘটনায় আতঙ্কে ঘাটাল শহরে বিক্ষিপ্ত ভাবে পাড়ার রাস্তা বাঁশ দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন বাসিন্দারা। তৎপর পুলিশও। সকাল দশটার মধ্যে শহরের আনাজ বাজারগুলি ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে। তবে এরই মাঝে চন্দ্রকোনায় একেক করে দোকানপাট খুলতে শুরু করে দিয়েছে। দাসপুরেও বাজার গুলিতে ভিড় বাড়ছে। সামাজিক দূরত্ব না মেনে দাসপুরে বাড়ির ছাদ ঢালাইও শুরু হয়ে গিয়েছে। ঘাটালে অনেকেই আবার এসবের তোয়াক্কা না করে আগের মতই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
তবে জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিকের সতর্কবার্তা, “রিপোর্ট নেগেটিভ মানেই করোনা চলে গিয়েছে এমনটা নয়। করোনাকে পুরোপুরি নির্মূল করতে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।”