প্রতীকী ছবি
সোমবার থেকে লকডাউন শিথিল হয়েছে। আর রবিবারই ঝাড়গ্রাম জেলায় নতুন করে পাঁচ করোনা আক্রান্তের কথা সামনে এসেছে। তারপরেও জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের নীরব।
স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন করে আক্রান্তরা মহারাষ্ট্র ফেরত পরিযায়ী শ্রমিক। পাঁচ জনেই জামবনি ব্লকের বাসিন্দা। তাঁরা হোম কোয়রান্টিনে রয়েছেন। রবিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনেই এই পাঁচ আক্রান্তের তথ্য দেওয়া হয়। সেই মতো ঝাড়গ্রাম জেলায় ১১ জন করোনা আক্রান্তের মধ্যে ৬ জন সুস্থ। বাকিরা কোথায় চিকিৎসাধীন, সেই তথ্য খোলসা করেনি প্রশাসন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জুন মাস থেকে উপসর্গহীন আক্রান্তদের আর পূর্ব মেদিনীপুরের বড়মা হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে না। বড়মা হাসপাতাল সূত্রেও জানা গিয়েছে, সেখানে ঝাড়গ্রাম জেলার কোনও রোগী নেই। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ‘‘উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তদের নিভৃতবাসে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।’’
সোমবার থেকে জেলায় খুলেছে সরকারি অফিস, সরকারি অতিথিনিবাস। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই রাস্তায় লোকজনের ভিড়। গ্রামীণ এলাকায় অনেকে মাস্ক পরছেন না। চিকিৎসক মহলের একাংশের মতে, সরকারি ভাবে ঝাড়গ্রাম জেলায় করোনা নিয়ে রাখঢাকের ফলে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। সাধারণ মানুষের একাংশের মনে দৃঢ় বিশ্বাস তৈরি হয়েছে, সবুজ জেলায় করোনা আক্রান্ত কেউ নেই। বস্তুত, গত মাসে জেলায় এসে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টেপাধ্যায় ঝাড়গ্রামকে করোনামুক্ত বলে গিয়েছিলেন। জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেনও কয়েকদিন আগে সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেছিলেন তিনজন আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁরা সুস্থ হয়েছেন।
তারপরে নতুন আক্রান্তের খোঁজ মিললেও প্রশাসন চুপ থাকায় ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। জেলার এক প্রাক্তন স্বাস্থ্যকর্তা বলছেন, ‘‘পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে করোনা আক্রান্ত ১৭৭। সেখানে করোনার তথ্য সরকারি ভাবে প্রতিদিন প্রকাশ্যে আসছে। অথচ ঝাড়গ্রামে উল্টোচিত্র। তথ্য গোপনের ফলে মানুষজনও নির্দ্বিধায় চায় দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন।’’ ওই স্বাস্থ্য কর্তার মতে, সত্যিই যদি ঝাড়গ্রাম করোনাহীন জেলা হয়, তাহলে ঝাড়গ্রামকে মডেল হিসেবে বাকি জেলা অনুসরণ করতে পারে। কত জনের পরীক্ষা হয়েছে, কতজন পজ়িটিভ খোলসা করা উচিত।
সরব বিরোধীরাও। ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রম বলেন, ‘‘গোপনীয়তার ফলেই আগামী দিনে জেলাকে আরও বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। প্রকৃত তথ্য না জানানোর ফলে মানু বিভ্রান্ত।’’ সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কেরও মত, ‘‘তথ্য গোপনের ফলে জেলায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।’’ ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ-এর আহ্বায়ক শ্রীমন্ত রাউত বলেন, ‘‘করোনা নিয়ে প্রকৃত তথ্য না জানালে মানুষ সচেতন হবেন কী করে!’’