ফাইল চিত্র
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঢুকে পড়েছে এ দেশেও। অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। মারণ এই রোগে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি দেখে এ রাজ্য জুড়ে জারি হয়েছে করোনা-সতর্কতা। ছুটি দেওয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে। তবে যেখানে রোগীর আনাগোনা লেগে রয়েছে, সেই হাসপাতালেই নেই বাড়তি সতর্কতা। মাস্ক, স্যানিটাইজার ছাড়াই রোগী সামলাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স, কর্মীরা। বাড়ছে ক্ষোভ।
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের এই ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। দেশ জুড়ে করোনা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। আগাম সতর্কতায় নানা পদক্ষেপ করছে রাজ্য সরকারও। খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে নানা পরামর্শ মেনে চলার কথা বলছেন। সরকারের তরফে চলছে প্রচারও। অথচ হাসপাতালের রোগী ও কর্মীদের জন্য করোনা-সতর্কতায় কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি স্বাস্থ্য দফতর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনে’র করোনা সংক্রান্ত নিয়মাবলী যতটা সম্ভব পালন করা হচ্ছে। জরুরি বিভাগ ও বহিবির্ভাগের ক্ষেত্রে কয়েকজন নার্স ও কর্মী ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাস্ক ব্যবহার করলেও অন্তর্বিভাগে সে সবের বালাই নেই। মিলছে না করোনায় কার্যকর এন-৯৫ মাস্ক-ও। সার্জিক্যাল মাস্ক দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহারের জন্য দফতরের তরফে কোনও নির্দেশিকা আসেনি। আপাতত ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের নিয়ম মেনে যেটুকু পালন করা যায় তা করা হচ্ছে। তাতে সব ওয়ার্ডে মাস্ক ব্যবহার হচ্ছে না এটা ঠিক। কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহির্বিভাগে মাস্ক ব্যবহার করছে। তবে হাত ধুতে ও এক মিটার দূরত্ব বজায়ের কথা বলা হচ্ছে।”
বাজারে এন-৯৫ মাস্ক ও স্যানিটাইজার বাড়ন্ত। চলছে কালোবাজারি। ফলে, হাসপাতালের নার্স, কর্মীদের পক্ষে চড়া দামে মাস্ক, স্যানিটাইজার কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালে যেটুকু সার্জিক্যাল মাস্ক ছিল তা দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। কয়েকটি ওয়ার্ডে স্যানিটাইজার রাখা হলেও সর্বত্র তা মিলছে না। এই পরিস্থিতিতে বারবার হাত ধোয়া ও এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গিয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের মতে, রোগীর থেকে এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করা কার্যত অসম্ভব। তা ছাড়া, একজন রোগীকে দেখার পরে হাত ধুয়ে অন্য রোগী দেখাও কঠিন। তাই বাস্তবে নিয়ম পালন করা যাচ্ছে না। হাসপাতালের এক নার্সের কথায়, “আমরা সার্জিক্যাল মাস্ক দিয়ে কাজ চালাচ্ছি। কিন্তু সেটা ব্যবহার করে তো সুফল মিলবে না। তাছাড়া রোগীর থেকে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখলে কাজ করব কী ভাবে।”
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ অশোক পাল আবার বলছিলেন, “মাস্ক ব্যবহার নিয়ে অনেক মতান্তর রয়েছে। তবে করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করলে ভাল। কিন্তু সত্যি বলতে সার্জিক্যাল মাস্ক ছাড়া হাসপাতালে কোনও মাস্ক নেই। তাই সব সময় মাস্ক ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাই প্রত্যেক রোগীকে দেখার পরে যাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায় সেই ব্যবস্থা করা উচিত।” হাসপাতালের সুপারেরও বক্তব্য, “এটা বাস্তব যে এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে রোগী দেখা অসম্ভব। কী ভাবে কী করা যায় সেটা দেখছি। তবে করোনার নজরদারির জন্য যে চারটি শয্যা চালু হতে চলেছে সেখানে আমরা যাবতীয় ব্যবস্থা রাখব।”