প্রতীকী ছবি
এগরা যোগ মিলেছিল আগেই। এবার করোনা আক্রান্তদের তালিকায় জুড়ে গেল জেলার দুই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা— তমলুক এবং হলদিয়ার নাম। তমলুকর শহর লাগোয়া শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের একটি গ্রাম এবং হলদিয়ার দুর্গাচক থানা এলাকার দুই বৃদ্ধ করোনায় আক্রান্ত রয়েছে। তাঁদের লালারসে পাওয়া গিয়েছে ওই ভাইরাসের উপস্থিতি। দু’জনেই কলকাতার দুই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বছর আশির ওই বৃদ্ধের চার ভাই। এক ভাই পরিবার নিয়ে আলাদাভাবে অন্যত্র থাকেন। বাকি তিন ভাইয়ের যৌথ পরিবার। কলকাতার বড় বাজারে বৃদ্ধের পরিবারের পান ব্যবসা রয়েছে। তা বৃদ্ধ, তাঁর ছেলে এবং এক ভাই দেখাশোনা করেন। ব্যবসা সূত্রের ভিন্ রাজ্যে যাতায়াতও রয়েছে তাঁদের। গত ২৪ মার্চ বিকেলে ওই বৃদ্ধ ও তাঁর আরেক ভাই নিজেদের গাড়িতে তমলুকের গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। ২৫ মার্চ বিকেল থেকে দেশ জুড়ে লকডাউন শুরু হয়। গ্রামের বাড়িতে থাকার সময়েই বৃদ্ধের জ্বর হয়। তাঁকে প্রথমে এলাকার এক হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ৩১ মার্চ তমলুক শহরের একটি নার্সিংহোমে এনে চিকিৎসককে দেখান পরিজন।
করোনা উপসর্গ থাকায় ওই নার্সিংহোমের চিকিৎসক কলকাতায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। সেই মতো ওই রাতেই কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে বৃদ্ধকে ভর্তি করানো হয়। ওই বৃদ্ধের সঙ্গে থাকা তাঁর ছেলে এবং ভাই সেখানে অসুস্থ হওয়ায় তাঁদেরও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বৃদ্ধের লালারসের নমুনা রিপোর্ট বুধবার রাতে এসেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধ করোনা আক্রান্ত।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, করোনা আক্রান্ত ওই বৃদ্ধের পরিজন এবং তাঁর সংস্পর্শে আসা অন্য ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ একটি দল গ্রামে গিয়ে বৃদ্ধের পরিবারের ১২ জন সদস্যকে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটির আইসোলেশনে রেখেছে। এঁদের মধ্যে একজন পুরুষ, পাঁচ জন মহিলা, তিন জন শিশু। এছাড়া, আরও চারজনকে তমলুক জেলা হাসপাতালে রাখা হয়েছে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। তাঁদের সবাইকে হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। বৃদ্ধকে চিকিৎসা করেছিলেন এমন জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসকে গৃহ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চিকিৎসক-সহ চার জনের লালারস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তমলুকের তিনটি নার্সিংহোমকে। সেখানের রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে কর্মীদের সেখানে নজরবন্দি করা হয়েছে।
হলদিয়ার বৃদ্ধের দেড় বছর আগে হৃদপিণ্ডের অস্ত্রোপচার হয়েছিল বলে স্থানীয় সূত্রের খব। গত ছ’মাস ধরে তিনি নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। গত ২৯ মার্চ বাড়াবাড়ি হতে বৃদ্ধকে তমলুকের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কলকাতা থেকে আসা এক চিকিৎসককে দেখান তিনি। বাড়ি ফিরে ৩০ মার্চ ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন বৃদ্ধ। তড়িঘড়ি তাঁকে ভর্তি করা হয় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। করোনার উপসর্গ থাকায় তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার জানা যায় ওই ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত।
বার্ধক্যজনিত কারণে ওই ব্যক্তি বাইরের কারও সঙ্গে তেমন মোলামেশা করতে না। ফলে তিনি কীভাবে করোনায় সংক্রিমত হলেন, সে নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর অনুমান, তমলুকের নার্সিংহোম থেকে কোনও ভাবে তিনি সংক্রমিত হতে পারেন। বৃহস্পতিবার হলদিয়া পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা বৃদ্ধের পরিজনকে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার জন্য পাঠান। ১০ জনকে হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘হলদিয়া ও তমলুকের ঘটনায় মোট ৪০ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।’’