কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের সঙ্গে পিপিপি মডেলে (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) প্রসূতিদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য চুক্তিবদ্ধ শহরের একটি বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টার। কিন্তু মহকুমা হাসপাতালের রিক্যুইজ়িশন স্লিপে ওই বেসরকারি সেন্টারের বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
যে সব পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে হয় না, সেগুলি যাতে নিখরচায় রোগীরা করাতে পারেন তার জন্য প্রায় সব সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে স্থানীয় কোনও বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টারের চুক্তি থাকে। রোগীরা ওই কেন্দ্রে গিয়ে সরকারি রিক্যুইজ়িশন স্লিপ দেখিয়ে ওই পরীক্ষাগুলি করিয়ে নেন নিখরচাতেই। পরে সেই টাকা চুক্তিবদ্ধ সেন্টারকে দিয়ে দেয় স্বাস্থ্য দফতর।
তাই বলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত সরকারি রিক্যুইজ়িশন স্লিপে কখনই সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা নিজের বিজ্ঞাপন দিতে পারে না। তাকে পুরোপুরি সরকারি নিয়মের উল্লঙ্ঘন হিসাবে ধরা হয়। কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে সেই বেনিয়মই চলছে বলে অভিযোগ। সেখানে রোগীদের যে রিক্যুইজ়িশন স্লিপে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা লিখে দেওয়া হচ্ছে সেই স্লিপের নীচেই একটি বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টারের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে! ওই সেন্টারটি ‘জননী সুরক্ষা যোজনা’ প্রকল্পে প্রসূতিদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছেন যে, সরকারি টাকাতেই ওই বিজ্ঞাপনযুক্ত স্লিপ ছাপা হয়েছে!
ওই স্লিপে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারের স্বাক্ষরও রয়েছে। কী করে এটা সম্ভব? কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের সুপার অরূপ রতন করণ বলেন,"এটা হওয়া অনুচিত। বেসরকারি সংস্থার বিজ্ঞাপন বাদ দিয়ে সরকারি রিক্যুইজ়িশন তৈরির কথা বলা হচ্ছে।" কিন্তু এত দিন ওই বিজ্ঞাপন তো সুপারের অনুমতি নিয়েই ছাপা হয়েছে। তখন সেটা অনুচিত জেনেও তিনি কী করে অনুমতি দিলেন? সুপার এর কোনও উত্তর দিতে চাননি।
ওই ডায়গনস্টিক সংস্থার কর্ণধার আবার হাসপাতালেরই ব্লাড ব্যাঙ্কের স্থায়ী কর্মচারী শেখ রাহেদ হোসেন মিয়াঁ। স্বাস্থ্য দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, কর্তব্যরত কোনও স্বাস্থ্য কর্মচারী বা আধিকারিক একইসঙ্গে কোনও বেসরকারি সংস্থা চালাতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে রাহেদ কী ভাবে সেটা করছেন? অভিযুক্ত শেখ রাহেদকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তাঁর ফোন বন্ধ ছিল।
নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত কুমার দেওয়ান অবশ্য বলেন, "হাসপাতালের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থার চুক্তি থাকে। তারা সরকারি পরিষেবায় টাকার বিনিময়ে সহযোগিতা করবে। কিন্তু সরকারি কাগজপত্রে সেই সংস্থা কোনও রকম ব্যক্তিগত প্রচার করতে পারে না।’’