কাঁথি পুরসভার দোতলায় শিশিরের ঘর এখন তালাবন্দি। —নিজস্ব চিত্র।
কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সাংসদ শিশির অধিকারীর ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুর কর্তৃপক্ষ। শুধু কাঁথির সাংসদ শিশিরের ঘরেই নয়, একে একে তালা পড়েছে তাঁর মেজছেলে তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘরেও। শিশিরের অন্য পুত্র সৌমেন্দু অধিকারীও এককালে কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান পদে বসেছেন। তাঁদের ঘরেও ঝোলানো হয়েছে তালা। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটের পর থেকে ধীরে ধীরে এই পদক্ষেপ করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তবে সম্প্রতি তা নজরে আসতে শুরু করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অলিন্দে থাকার সুবাদে কয়েক দশক ধরে কাঁথি পুরসভা হয়ে উঠেছিল অধিকারী পরিবারের নিত্য বিচরণক্ষেত্র। শিশিরের পাশাপাশি শুভেন্দু, সেজছেলে দিব্যেন্দু এবং ছোটছেলে সৌমেন্দুর জন্যও বরাদ্দ ছিল একাধিক ঘর। এককালে দিনেরবেলা পুরসভার কাজের পর রাত পর্যন্ত চলত তাঁদের রাজনৈতিক কাজকর্ম। সারা দিনের কাজকর্ম মিটিয়ে রাতে কাঁথি পুরসভায় নিজস্ব চেম্বারে তৃণমূলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বসতেন অধিকারী পরিবারের সদস্যেরা। তবে গত বছরের নভেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে শুভেন্দুর বিজেপি-তে যোগদানের পর থেকেই সে ছবিতে বদল ঘটেছে।
গেরুয়া শিবিরে শুভেন্দুর পা রাখার পর থেকেই অধিকারী পরিবারের অন্যদের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়তে থাকে তৃণমূল তথা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ঘটনাচক্রে, তার পর থেকেই কাঁথি পুরসভাকে অধিকারী পরিবারের প্রভাব-মুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ করতে শুরু করেন বর্তমান পুর কর্তৃপক্ষ। প্রথমেই তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় পুরসভার দোতলায় থাকা শিশিরে ঘরটিতে। খুলে ফেলা হয় শিশিরের নামাঙ্কিত প্লেটও। যা বহু বছর ধরে দরজায় লাগানো ছিল।
চেয়ারম্যান থাকাকালীন পুরসভার তিনতলায় সৌমেন্দু যে ঘরটিতে বসতেন, সেখানে এখন বসেন পুর-প্রশাসক সিদ্ধার্থ মাইতি। চারতলায় শুভেন্দু এবং দিব্যেন্দুর ঘরটিকে এখন পুর-পরিষেবার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সিদ্ধার্থ বলেন, ‘‘আগে শিশির বা শুভেন্দু অধিকারীরা অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে তাঁদের চেম্বারে বসতেন। একাধিক ঘর ব্যক্তিগত ভাবেও ব্যবহার করা হত। ফলে অনেক রাত পর্যন্ত অফিস খোলা থাকত। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটার চালাতে হত। ফলে বিদ্যুৎ ও তেলের জন্য পুরসভার কাঁধে বিপুল খরচের বোঝা চাপত। তবে সেই ঘরগুলোকে এখন নাগরিক পরিষেবার জন্য কাজে লাগানো হচ্ছে।’’
কাঁথি পুরসভাকে অধিকারী পরিবারের প্রভাব-মুক্ত করতেই কি এই পদক্ষেপ? সিদ্ধার্থ অবশ্য অন্য কথা বলেছেন। তাঁর দাবি, পুরসভার খরচ কমানোর জন্যই এ পদক্ষেপ। সিদ্ধার্থের কথায়, ‘‘আগে যে খরচ হত, তা এখন অনেকটাই কমেছে। অফিসের প্রশাসনিক কাজকর্ম সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হয়। কোনও কোনও দিন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্তও অফিস খোলা রাখতে হয়।’’