এই ব্যানারেই জল্পনা। নিজস্ব চিত্র
এতদিন তিনি ছিলেন জঙ্গলমহলের ‘মুক্তিসূর্য’। এ বার তিনি হলেন ‘জঙ্গলমহলের কুটুম’।
তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা পর্যবেক্ষক তথা পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে এমন বিশেষণে ভূষিত করেছেন তাঁর অনুগামীরাই। শুভেন্দুর ‘অনুপ্রেরণা’য় বৃহস্পতিবার দুঃস্থদের শীতবস্ত্রও বিলি করা হয়েছে।
শুভেন্দুর পাশাপাশি তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও দলীয় ভাবে ঝাড়গ্রামের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকে দলে সূক্ষ্ম টানাপড়েনও শুরু হয়েছে। পার্থ ও শুভেন্দুকে জেলায় একসঙ্গে দেখা যায়নি। তারই মধ্যে শুভেন্দুর এমন বিশেষণ, তাঁর ‘অনুপ্রেরণা’য় অনুষ্ঠান ঘিরে জেলায় শোরগোল পড়েছে।
জামবনির বালিডিহা গ্রামের দক্ষিণা কমিউনিটি হলে শুভেন্দু-অনুগামীদের উদ্যোগে অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল এ দিন। তার ব্যানারেই শুভেন্দুর ছবির সঙ্গে লেখা ছিল ‘জঙ্গলমহলের কুটুম’। শুভেন্দুর পাঠানো পাঁচশো কম্বল, শাড়ি ও শাল বিলি করা হয় দুঃস্থদের। এসেছিলেন শুভেন্দুর প্রতিনিধি স্বদেশরঞ্জন ভুঁইয়া।
অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক ছিলেন স্নেহাশিস ভকত সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। তাঁর দাদা কেন্দডাংরি পঞ্চায়েতের নির্দল প্রধান সৌমেন ভকত ২০১০ সালে মাওবাদীদের হাতে খুন হন। স্নেহাশিস বলেন, ‘‘ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে জঙ্গলমহলকে আজকের জঙ্গলমহলে উত্তরণের ক্ষেত্রে শুভেন্দুদার ভূমিকা অবিসংবাদিত। শুভেন্দুদাকে তাই আমরা জঙ্গলমহলের কুটুম অর্থাৎ আত্মীয় মনে করি। বিপদে-আপদে শুভেন্দুদাকেই সব সময় পাশে পাই।’’ অনুষ্ঠানে ছিলেন তৃণমূলের জামবনি ব্লক সভাপতি নিশীথ মাহাতো, লালগড় থানার আইসি বিশ্বজিৎ পাত্র।
গত বছর লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের বিপর্যয়ের পরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দলীয় পর্যবেক্ষকের পদ থেকে সরিয়ে শুভেন্দুকে দায়িত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু ঝাড়গ্রামে এসে সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মসূচি শুরু করেন। কিন্তু খড়্গপুরে উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের বড় জয়ের পরেই গত ডিসেম্বরে পার্থকে ঝাড়গ্রামে দলের সহ-পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেন মমতা। ২৩ ডিসেম্বর পার্থ এনআরসি বিরোধী কর্মসূচিতে আসেন। ৭ জানুয়ারি নেতাই দিবসে লালগড়ে যান শুভেন্দু। কিন্তু দলীয় কর্মসূচিতে আর ঝাড়গ্রামে আসেননি। গত ২০ জানুয়ারি জঙ্গলমহল উৎসবের উদ্বোধন করেন পার্থ। প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণপত্র ও সরকারি বিজ্ঞাপনে শুভেন্দুর নাম ছাপা হলেও তিনি আসেননি। তবে উৎসবের পরে দলীয় বৈঠকে পার্থ জানান, শুভেন্দুর সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। যদিও পার্থ চলে যেতেই শুভেন্দু অনুগামীরা ঘরোয়া আলোচনায় জানিয়েছিলেন, ‘‘শুভেন্দুদা কারও লেজুড় হয়ে কাজ করতে পারবেন না।’’
জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেন অবশ্য বলছেন, ‘‘কোথাও সমস্যা নেই। পর্যবেক্ষকদের নির্দেশ মতোই দলের কাজ হচ্ছে।’’