—প্রতীকী চিত্র।
ঝাড়গ্রামের এক পুর-প্রতিনিধির বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। খোদ রাজ্য থেকে ওই পুর প্রতিনিধির নামে অভিযোগ এসেছে জেলা প্রশাসনের কাছে। এ ব্যাপারে আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছেন ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। কে ওই পুর প্রতিনিধি তা নিয়ে চলছে জোর চর্চা।
মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামের বিবেকানন্দ সভাকক্ষে উড়ালপুলের সার্ভিস রাস্তা নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয় পুরসভার। সেখানে ব্যবসায়ীরাও ছিলেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে ঝাড়গ্রামের ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে ধমক দেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। তিনি জানান, সংবাদমাধ্যমের মারফত তিনি জেনেছেন, সরকারি জায়গা একের পর দখল হয়ে যাচ্ছে। অথচ এ বিষয়ে কোনওদিন রিপোর্ট আসেনি। এ গুলো মানা যাবে না বলে জানান জেলাশাসক। কেউ ভয় পেলেও তিনি যে কোনওকিছুর পরোয়া না করে ব্যবস্থা নেবেন তা জানিয়ে দেন জেলাশাসক। তারপরই পুরপ্রধানকে জেলাশাসক জানান, বিষয়টিতে এক পুরপ্রতিনিধি জড়িত রয়েছেন। উপর মহল থেকে তাঁর নামে অভিযোগ এসেছে। পুরপ্রধানকে নাকি ওই পুর প্রতিনিধির নাম জানাননি জেলাশাসক। পরে সে নাম জানাবেন বলে পুরপ্রধানকে আশ্বস্ত করেন তিনি।
কে ওই পুর প্রতিনিধি, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরের মধ্যে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। কারণ, গত কয়েক বছরে ঝাড়গ্রাম শহরের বিভিন্ন জায়গায় জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। কোথাও খাস জমি দখল করে বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে। আবার কোথাও ক্যানেল পাড়ের উপর বাড়ি হয়ে গিয়েছে। ক্যানেলের অস্বিত্ব এখন সংকটের মুখে। ক্যানেল পাড়ে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক বাড়ি। আবার কোথাও বন দফতরের জমি বিক্রি হয়ে বাড়ি তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুরপ্রতিনিধি জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার পাট্টার জমিও কয়েক বার হাত বদল হয়েছে। যে পাট্টার জমি বিক্রি করা যায় না, সেই জমি প্রভাব খাটিয়ে বিক্রি হচ্ছে অরণ্যশহরে। সূত্রের খবর, জমি হাত বদল হলেও সংশ্লিষ্ট পুর প্রতিনিধির পকেটে মোটা অঙ্কের উপঢৌকন আসে।
আবার কেউ খাস জায়গায় বাড়ি তৈরি করলে সংশ্লিষ্ট পুরপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে মোটা উপঢৌকন দেন। শহরের এক প্রবীণ নেতা বলছেন, ‘‘গত কয়েক বছরে সরকারি জমি, খাস জমি দখলের ক্ষেত্রে পুরপ্রতিনিধিরা জড়িয়ে পড়েছেন। পুরপ্রতিনিধিদের ডান ও বাম হাতে যাঁরা থাকনে তাঁরা অর্থের বিনিময়ের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। যার ফলে দলেরও বদনাম হচ্ছে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ও রামকৃষ্ণ মিশনের পাশে সরকারি জায়গায় যে বাড়ি হয়েছে তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলাশাসক। দলীয় সূত্রে খবর, শহরের একাধিক পুরপ্রতিনিধি জমি দখলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ। জেলার এক বিধায়ক নাকি এক পুর-প্রতিনিধির বিরুদ্ধে শীর্ষ মহলে অভিযোগ জানিয়েছেন। বৈঠকে থাকা এক ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘কে ওই পুর প্রতিনিধি তা সকলে আঁচ করতে পেরেছেন। কারণ, গত কয়েক বছরে ওই পুরপ্রতিনিধির আড়ে-বহরে বৃদ্ধি হয়েছে অনেক। তিনি আবার দলীয় পদে রয়েছেন।’’ সরকারি জায়গা দখল প্রসঙ্গে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘বিএলআরওকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনত পদক্ষেপ করা হবে।’’
শাসক দলের পুর প্রতিনিধি সরকারি জমি দখলে জড়িত থাকায় অস্বস্তি শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গী বলেন, ‘‘সরকারি জায়গা দখলের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকে তা সরকারি ভাবে ব্যবস্থা নেবে। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুন্ডু বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতা জড়িত না থাকলে সরকারি জমি দখল হওয়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়। এটা এখন সরকার বুঝতে পেরেছে। আমরা আশা রাখব যাঁরা দখলদারির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’