ব্যস্ত মহকুমাশাসক। নিজস্ব চিত্র
তিরিশ দিনের খাবার কি একদিনে খাওয়া যায়?
পুর পরিষেবা প্রশ্নে প্রশাসকের ভূমিকা সম্পর্কে বুধবার ডেববার প্রশাসনিক বৈঠকে এমনই প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পরামর্শ ছিল প্রতিদিন বৈঠকে বসতে হবে।
বৈঠকের ২৪ ঘণ্টা কেটেছে। বিরোধীদের বক্তব্য, পুরভোট না করিয়ে প্রশাসক বসিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফল যা হওয়ার তাই হচ্ছে। পুর পরিষেবা মিলছে না। জনমত বিপক্ষে যাচ্ছে আঁচ করে এখন সবকিছুর জন্য একজনকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। বিজেপির জেলা সম্পাদক অরূপ দাস বলেন, ‘‘ঠিক সময়ে পুর- নির্বাচন হলে পুর- পরিষেবা নিয়ে শহরবাসী সমস্যায় পড়তেন না। তৃণমূল ভোটকে ভয় পাচ্ছে!"
মেদিনীপুর পুরসভাতেও বসেছে প্রশাসক। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষ রয়েছেন প্রশাসক পদে। কেমন ভাবে তিনি সামালাচ্ছেন পুরসভার কাজ?
প্রশাসনিক আধিকারিকেরা বলছেন, কার্যত জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ করতে হচ্ছে মহকুমা শাসককে। কারণ, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ডিএসএ- এর (জেলা ক্রীড়া সংস্থার) কার্যনির্বাহী সম্পাদকেরও দায়িত্ব নিয়েছেন দীননারায়ণ। সকালে তিনি যাচ্ছেন মহকুমা শাসকের অফিসে। দুপুরে পুরসভা। বিকেলে ফের মহকুমা শাসকের অফিস। সন্ধ্যায় ফিরে আসছেন পুরসভায়। এক পুরকর্মী জানাচ্ছেন, ‘‘উনি (মহকুমা শাসক) যেদিন দুপুরে আসেন সেদিন সন্ধ্যায় বেশিক্ষণ থাকেন না। যেদিন দুপুরে আসেন না, সেদিন সন্ধ্যায় বেশিক্ষণ থাকেন। প্রায় প্রতিদিনই রাত আটটা- সাড়ে আটটায় পুরসভা থেকে বেরোন। আসলে পুরসভায় কাজের ভালই চাপ থাকে। জেলার সদর শহর তো। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রগুলিতে ওনাকেই সই করতে হয়।’’ এমনিতে, মহকুমাশাসকের দফতরের কাজের ‘চাপ’ কম নয়। সেই ‘চাপ’ সামলে পুরসভার কাজের ‘চাপ’ সামলাতে হয়। এ ভাবেই চলছে কয়েক মাস। এ বার জুড়েছে ডিএসএ- এর কাজও। ডিএসএ- এর সম্পাদক ছিলেন বিনয় দাসমাল। বিনয়বাবু প্রয়াত হয়েছেন। এতে সংস্থার প্রশাসনিক কাজে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। পরিস্থিতি দেখে মহকুমাশাসককেই ডিএসএ- এর কার্যনির্বাহী সম্পাদক করা হয়েছে।
একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলাতে অসুবিধে হয় না? দীননারায়ণবাবুর জবাব, ‘‘দায়িত্ব ভালভাবে পালন করার সব রকম চেষ্টাই করি।’’
মহকুমা শাসক চেষ্টা করেন বটে। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, ডেবরার বৈঠকে কখনও তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘প্রশাসক হয়তো ভাবেন আমার রুটিন কাজটা করে দিচ্ছি। রাস্তা, আলো, পানীয় জল সব দায়িত্ব পুরসভার উপর বর্তায়।’’ আবার মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রণব বসুর কথার সূত্র ধরে তিনি বলেছেন, ‘‘তিরিশ দিনের খাবার কি একদিনে খাওয়া যায়? মানুষের কাছে গালাগালিটা আমি খাচ্ছি। এ বার থেকে রোজ বসবেন।’’ প্রসঙ্গত, প্রশাসকের পাশাপাশি পুরসভায় রয়েছেন দু’জন সহ প্রশাসক। মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে এই দায়িত্বে রয়েছেন বিধায়ক মৃগেন মাইতি এবং প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রণব। প্রশাসনিক বৈঠকে তিনিই অভিযোগ করেছিলেন প্রশাসক নিয়মিত বৈঠক করছেন না। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ পাওয়ার পরদিনই বৃহস্পতিবার দীননারায়ণ বলেন, ‘‘আমি রোজই পুরসভায় যাই। এ বার নিয়মিত বৈঠক হবে।’’ কিন্তু সত্যিই কি রোজ বৈঠক সম্ভব? তৃণমূলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডব বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন সবই পুর- পরিষেবার স্বার্থে, শহরবাসীর স্বার্থে। রোজই বৈঠক হওয়া উচিত।’’
হয়তো রোজ বৈঠক হবে। কিন্তু তার পরে পুর পরিষেবা মিলবে তো! সন্দেহ কাটছে না বিরোধীদের।