এই ভাবে মেশিন দিয়ে বালি তুলে ভরাট করা হচ্ছে রূপনারায়ণ। নিজস্ব চিত্র digantamannaabp@gmail.com
পুকুর চুরি। সেতু চুরি। মোবাইলের টাওয়ার চুরি। আস্ত ট্রেন ইঞ্জিন চুরি। এ রাজ্যের সঙ্গে সীমানা ভাগ করে নেওয়া বিহারে চুরির ঘটনার তালিকায় মিলবে এমন সব অদ্ভূত কাণ্ডের ভুরি ভুরি উদাহরণ। যা দেখে হামেশাই চমকে ওঠেন এ রাজ্যবাসী। এবার এই বাংলাতেই না কি হচ্ছে নদ চুরির চেষ্টা! রীতিমতো গার্ডওয়াল দিয়ে এবং নদীখাত ভরাট করে রূপনারায়ণের গতিপথই পাল্টে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
রূপনারায়ণ নদ থেকে বালি চুরির অভিযোগ চেনা। কিন্তু সেই বালি দিয়েই আস্ত রূপনারায়ণের নদ ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে হাওড়ার নাউপালা এলাকা। অভিযোগ, প্রায় ৫০ ফুট চওড়া এবং ৫০০ ফুট দীর্ঘ এলাকা জুড়ে গার্ডওয়ালও দিয়ে রূপনারায়ণের স্রোত ঘোরানোর কাজ চলছে। এ বিষয়ে সেচ দফতরে অভিযোগ দায়ের করেছে কংগ্রেস।
দু'বছর আগে কোলাঘাটের দেনানে রূপনারায়ণের বাঁধের প্রায় ১৫০ মিটার অংশে ধস নামে। কোলাঘাট জুড়ে রূপনারায়ণের ভাঙন ঠেকাতে সিল্টেশন পদ্ধতি কাজে লাগাতে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সেচ দফতর বাঁশের খাঁচা ফেলার কাজ করেছে। কোলাঘাটের ভাঙন ঠেকাতে যখন মরিয়া সেচ দফতর তখন কোলাঘাটের বিপরীত দিকে রূপনারায়ণ ভরাট করার অভিযোগ সামনে এসেছে। বেশ কয়েক বছর আগে দেনানের বিপরীতে হাওড়ার নাউপালা এলাকায় রূপনারায়ণের গা ঘেঁষে একটি বড় আকারের হোটেল তৈরি হয়েছে।হোটেলটির নাম 'সোনার বাংলা'।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, নদ থেকে নির্ধারিত দূরত্বে নির্মাণ না করার জন্য ওই হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সে সময় ন্যাশানাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। সেই মামলা এখনও এখনও চলছে। অভিযোগ, পুরনো মামলার তোয়াক্কা না করে এখন রূপনারায়ণ নদ ভরাট করার কাজ শুরু করেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেল লাগোয়া ৫০০ ফুট দীর্ঘ রূপনারায়ণ নদের অংশে প্রথমে বোল্ডার এবং লোহার জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। তারপর নারায়ণ নদের মাঝখানে দু'টি মেশিন বসিয়ে দিনরাত তোলা চলছে নদের বালি। আর সেই বালি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছ বোল্ডার দিয়ে ঘিরে দেওয়া অংশ। নদের বালি সমান ভাবে চারানোর জন্য কাজ করছে দু'টি জেসিবি মেশিন। মূলত আরও বেশি করে পর্যটক টানতেই না কি রূপনারায়ণের স্রোত বরাবর নির্মাণের লক্ষে এই কাজ চলছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ওই অংশ দিয়ে আগে রূপনারায়ণ খরস্রোতে বয়ে যেত। গার্ডওয়াল দিয়ে ভরাট করে রূপনারায়ণের স্রোত ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেভাবে আস্ত নদ দখল করে ভরাট করা হচ্ছে, তাতে কোলাঘাট জুড়ে রূপনারায়ণের ভাঙন আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকার মানুষজন। অবিলম্বে রূপনারায়ণ ভরাট করা বন্ধ করতে সেচ দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছে কোলাঘাট ব্লক কংগ্রেস। কোলাঘাট ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি সমীর হোসেন বলেন, ‘‘শুধু নদ দখল করাই নয়। মেশিন বসিয়ে নদেরই বালি তুলে ভরাট করা হচ্ছে। যেভাবে রূপনারায়ণের স্রোত ঘুরিয়ে দেওয়া কাজ শুরু হয়েছে, তাতে আগামী দিনে গোটা কোলাঘাট রূপনারায়ণের গর্ভে তলিয়ে যাবে। অবিলম্বে এই বেআইনি কাজ বন্ধ করে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’’
সেচ দফতরের পাঁশকুড়াৃ-১ শাখার এসডিও নাজেস আফরোজ বলেন, ‘‘বিষয়টি নজরে এসেছে। যেভাবে গার্ডওয়াল তৈরি হচ্ছে তাতে কোলাঘাটের ভাঙন আরও বাড়বে। হাওড়া জেলা সেচ দফতরকে বিষয়টি জানাব।’’ হোটেলটি যে ব্লকে রয়েছে, সেই বাগনান-২ এর বিডিও নেহাল আহমেদ বলছেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’