এই খালের পাড় থেকে মাটি কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
আয়লা, আমপান থেকে ইয়াস। গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপকূল এলাকার চাষাবাদ নষ্ট হয়। তাই সরকারি উদ্যোগে খাল সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই খালপাড় থেকে মাটি কেটে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে এলাকা তৃণমূল নেতা তথা স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের পরিবারের লোকেদের ঘনিষ্ঠরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। সব জেনেও প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ করছে না বলেও অভিযোগ।
বঙ্গোপসাগরের একেবারে উপকূলের গ্রাম কাঁথি-১ ব্লকের বিরামপুট। পরপর কয়েক বছর ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবে খালের মাধ্যমে নোনা জল ঢুকেছে চাষের জমিতে। এলাকার মানুষদের দাবি, প্রচুর ক্ষতি হয়েছে চাষের জমির। সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগে খাল সংস্কার করা হয়। তারপর খালের দু’দিকের পাড় মাটি দিয়ে উঁচু করে বাঁধানো হয়। গৌরাঙ্গ শাসমল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘পাশ্ববর্তী জুনপুটে গঙ্গাপুজো চলছে। এরই ফাঁকে শাসক দলের লোকেরাই খালপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করছে।যাতে নোনা জল না ঢোকে এবং চাষাবাদের ক্ষতি না হয় তার জন্যই খাল সংস্কার আর পাড় বাঁধানো হয়েছিল। কিন্তু শাসক দলের লোকেরাই যদি মাটি চুরি করে বিক্রি করে তাহলে আর কী বলবেন!’’ গৌরাঙ্গ হাজরা নামে আর এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘খালের ধারে এক জায়গায় মাটি জড়ো করা হচ্ছে। তারপর সেখান থেকে গাড়িতে করে অন্যত্র মাটি সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
ওই মাটি কিনছেন এমন একটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গাড়ি পিছু ৪০০ টাকা করে দাম নেওয়া হচ্ছে। এরকম ১৮ গাড়ি মাটি কিনেছেন তাঁরা। কারা বিক্রি করছেন এই সব মাটি? উত্তরে ওই পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘‘মানস দাস এই মাটি বিক্রি করছেন।’’
কে এই মানস? স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, এলাকায় তৃণমূল নেতা হিসেবে তিনি পরিচিত। কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ওই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য নন্দদুলাল গিরির মারা গিয়েছেন। তারপর গ্রামের সাংগঠনিক কিংবা উন্নয়নমূলক কাজকর্ম এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান মানস এবং তার ঘনিষ্ঠদের নিয়েই পরিচালনা করেন। এরকমই চার থেকে পাঁচ জন খালপাড়ের মাটি চুরি করে বিক্রি করছেন। এ প্রসঙ্গে শেখ রাজীব নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘কোনওভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে সমস্ত দফতরে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাচ্ছি।’’
স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা তৃণমূল নেতা সুকুমার ভুঁইয়া অবশ্য বলছেন, ‘‘কারা মাটি বিক্রি করছে জানি না। তবে এমন কাজ করা উচিত নয়। যারা করেছে তারা অন্যায় করেছে।’’ তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রধান অপর্ণা দাসের দাবি, ‘‘সম্পূর্ণ মিথ্যে অভিযোগ। বিডিওর অনুমতি নিয়েই হয়তো মাটি কাটা হয়েছে। তবে খালপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করার অভিযোগ দলের উচ্চ নেতৃত্ব এসে দেখে গিয়েছেন। সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে।’’ এবিষয়ে কাঁথি-১ ব্লকের বিডিও তুহিন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘এ সবের কিছুই জানিনা। এটা সরাসরি ভূমি দফতর নিয়ন্ত্রণ করে।’’
ঘটনায় শাসক দলকে কটাক্ষ করেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘তৃণমূলরাজ্যে সর্বস্ব চুরি করছে। সরকারি টাকা খরচ করে বাঁধানো খালপাড়ের মাটি শুধু লুট হচ্ছে না।এলাকার চাষিদের পেটেও লাথি মারা হচ্ছে। এরপরেও প্রশাসন ওদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছে না। কারণ পিছনে তৃণমূলের বড় নেতাদের মদত রয়েছে।’’