মেদিনীপুরে সিপিএমের মিছিল। নিজস্ব চিত্র।
এক যুগের বেশি সময় পরে ফিরে এল পুরনো অভিযোগ।
পুলিশের উর্দি পরে শাসক আক্রমণ শানাচ্ছে বিরোধীদের উপর। নন্দীগ্রাম আন্দোলন পর্বে প্রায়ই এ ধরনের অভিযোগ শোনা যেত তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূলের মুখে। সিপিএমের বিরুদ্ধে ‘চটি পুলিশ’-সহ বাছা বাছা বিশেষণে আক্রমণ শানাত তারা। এখন পাল্টেছে দিন। ক্ষমতায় তৃণমূল। বিরোধী সিপিএম। কিন্তু অভিযোগ সেই একই। মঙ্গলবার মেদিনীপুরে এসে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বললেন, ‘‘তৃণমূলের কোন গুন্ডা পুলিশের উর্দি পরেছে, আমরা জানতে চাই!’’ তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজয় হাজরার খোঁচা, ‘‘ডেপুটেশনের নামে আইন অমান্য করেছে সিপিএম। আসলে এ সবই প্রচারের আলোয় আসার কৌশল। অবশ্য মানুষের কাছে ওরা দশম আশ্চর্যে পরিণত হয়েছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতির দাবি, ‘‘লুটপাট, ভাঙচুর। সিপিএমের চেহারা সেই আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। সভা থেকে ওদের নেতারাই উস্কানি দিয়েছে।’’
উপলক্ষ জেলাশাসকের দফতর অভিযান। সেই কর্মসূচিতেই মেদিনীপুরে এসেছিলেন সেলিম। ছিলেন দলের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ প্রমুখ। কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় সিপিএমের কিছু কর্মীর। পুলিশের লাঠিচার্জে দলের একাধিক কর্মী জখম হয়েছেন, অভিযোগ সিপিএমের। এরপরই পুলিশকে নিশানা করে সেলিমকে বলতে শোনা যায়, ‘‘পুলিশ ভুল করছে। এগারো বছর ধরে ভুল করেছে। আজকেও ভুল করছে।’’ তিনি জুড়েন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচি করছি। যে লাঠিচার্জ করেছে, তাকে চিহ্নিত করুন। তার নামটা আমরা জানতে চাই। তৃণমূলের কোন গুন্ডা পুলিশের উর্দি পরেছে, আমরা জানতে চাই!’’ সুশান্ত বলেন, ‘‘যারা আজকের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে রক্তাক্ত করেছেন, তাঁদের বলছি, সাবধান হয়ে যান। না হলে ক্ষমা করবে না মানুষ।’’
কয়েক দিন ধরেই কর্মসূচির সমর্থনে প্রচার চলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলের কর্মী- সমর্থকেরা এসেছিলেন। এ দিন শুরুতে মিছিল হয়। মিছিল পৌঁছয় জেলাশাসকের দফতরের সামনে, কালেক্টরেট মোড়ে। এখানে সভা হয়েছে। জেলাশাসকের বাংলোর উল্টোদিকে থাকা গেট দিয়ে কালেক্টরেট চত্বরে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন সিপিএমের একদল কর্মী। বাধা দেয় পুলিশ। এখানে পুলিশের সংখ্যা খুবই কম ছিল গোড়ায়। উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশের সংখ্যা কম থাকার সুযোগে সিপিএমের কিছু কর্মী ব্যারিকেড টপকে কালেক্টরেট চত্বরে ঢুকেও পড়েন। এই চত্বরে রীতিমতো স্লোগান তুলে মিছিল করেন তাঁরা। পরে আরও পুলিশ এসে পৌঁছয় এই গেটের সামনে। সিপিএমের অভিযোগ, অকারণে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেনি। ঠেলাঠেলির সময়ে কোনও ভাবে কেউ জখম হয়ে থাকতে পারেন। সিপিএমের আরও দাবি, কর্মসূচিতে যোগ দিতে মেদিনীপুরে আসার পথেও বাধা পেতে হয়েছে দলের কর্মীদের। কেশপুরের সুপা মোড়ে বাস লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। ইট ছোড়ে তৃণমূলের লোকজনই। দু’জন কর্মী ইটের আঘাতে জখম হয়েছেন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁদের ভর্তি করতে হয়েছে।
সভা থেকে তৃণমূল, বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। তবে সেলিম বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন পুলিশের বিরুদ্ধে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বাংলার পুলিশ দলদাস। অনেক দালালি করেছেন। আর নয়। আমরা পুলিশকে বলছি, চোর ধরো, জেলে ভরো। পুলিশের কাজ কী? চোর ধরা। পুলিশ পুলিশের কাজ করছে না। যারা পুলিশের উর্দি পরে আছেন, সব ভাল লোক, এমন কথা বিশ্বাস করা যায় না। এক সময়ে পুলিশেরই একজন মমতাকে বলেছিল মা। এখন মেয়ে মা- কে গালাগালি করছে!’’
পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফের মাঠে নেমেছে সিপিএম। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতেও জড়িয়ে পড়েছে তারা। যদিও আরেক বিরোধী দল বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়ের খোঁচা, ‘‘ঘোলাজলে মাছ ধরতে চাইছে সিপিএম। তবে পারবে না।’’