কালোবাজারি রুখতে কমিটি। — ফাইল চিত্র।
আবাস প্রকল্পে উপভোক্তা তালিকা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামাল দিয়ে উপভোক্তাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়েছে।তালিকা ধরে প্রথম দফায় অনুমোদিত সব উপভোক্তাদের পাকাবাড়ি তৈরির প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর সেই সঙ্গে সময়সীমা বেঁধে উপভোক্তাদের বাড়ি তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমস্ত পঞ্চায়েতে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, পাকাবাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম মেনে কীভাবে বাড়ি তৈরি করতে হবে তা বিস্তারিত জানাতে প্রতিটি পঞ্চায়েতে উপভোক্তাদের নিয়ে সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে। বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত জেলাজুড়ে এই শিবির চলবে। উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক আকাউন্টে প্রথম কিস্তির টাকা জমার পরেই দ্রুত বাড়ি তৈরি শুরু করতে হবে। ৯০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। আবাস প্রকল্পে প্রথম দফায় পূর্ব মেদিনীপুরে মোট ৫৩ হাজার ৪০০টি পরিবারের পাকাবাড়ির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জেলার মোট ২৫টি ব্লকের কোন ব্লকে কত বাড়ি তৈরি হবে তার লক্ষ্যমাত্রাও বাঁধা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের মধ্যে ওই সমস্ত উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক আকাউন্টে বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা জমা পড়তে পারে বলে আশা করছে প্রশাসনিক মহল। সে ক্ষেত্রে জেলার সব ব্লকে পাকাবাড়ি তৈরির জন্য ইট, বালি, স্টোনচিপস, সিমেন্ট, লোহার রড সহ বিভিন্ন সামগ্রীর চাহিদা অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসায়ীরা যাতে ওই সব সামগ্রীর কালোবাজারি না করতে পারে সেজন্য জেলাপ্রশাসনের তরফে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
জেলার প্রতিটি ব্লকের বিডিওরা সংশ্লিষ্ট ব্লকে কতগুলি ইটভাটা, নির্মাণসামগ্রীর দোকান রয়েছে তার তথ্য সংবলিত তালিকা তৈরি করছেন। ইটভাটা মালিক ও নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসায়ীদের সাথে বিডিওরা বৈঠক করে সতর্ক করছেন যাতে কোনও অজুহাতে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেশি না নেওয়া হয়। এবিষয়ে উপভোক্তাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। এ জন্য জেলার প্রতিটি ব্লকে বিডিও, বিএলআরও এবং থানার ওসি-কে নিয়ে তিন সদস্যের নজরদারি কমিটি গড়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, গত বছর এই সময়ে ইট, বালি সহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর দাম ও চার মাস আগের দামের তালিকা করা হয়েছে। ওই দামের সাথেই সামঞ্জস্য অনুযায়ী নির্মাণসামগ্রীর দাম নিতে হবে। এর অন্যথা হলে প্রশাসনের তরফে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপভোক্তাদের বিভিন্ন অভিযোগ বা সমস্যা নিয়ে পদক্ষেপ করার জন্য প্রতিটি পঞ্চায়েতে একজন নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। ‘আবাস বন্ধু’রা এবিষয়ে সহযোগিতা করবেন। উপভোক্তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য প্রতি ব্লকে ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলা হয়েছে।
তমলুকের বিডিও সৌমেন মণ্ডল বলেন, ‘‘আবাস প্রকল্পে আমাদের ব্লকে প্রথম দফায় ১৪৬৪ জন উপভোক্তা পরিবারের পাকাবাড়ি নির্মাণের অনুমোদন মিলেছে। নির্মাণ কাজ নিয়ে বিস্তারিতভাবে উপভোক্তাদের নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। নির্মাণ সামগ্রীর দাম যাতে কোনও অজুহাতে বেশি না নেওয়া হয় সেজন্য ব্লকের নির্মাণসামগ্রী ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে সতর্ক করা হচ্ছে।’’ চণ্ডীপুর ব্লকে প্রথম দফায় ১৮৬৬ উপভোক্তার বাড়ি তৈরির অনুমোদন মিলেছে। বিডিও অনির্বাণ মণ্ডল বলেন, ‘‘বাড়ি নির্মাণ নিয়ে উপভোক্তাদের সচেতন করা হচ্ছে। নির্মাণসামগ্রী পেতে যাতে সমস্যা না হয় ও অতিরিক্ত দাম না নেওয়া হয় সেজন্য ইটভাটা মালিক, নির্মাণসামগ্রী ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে।’’
জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘আবাস প্রকল্পে প্রথম দফায় জেলায় ৫৩ হাজার ৪০০টি পরিবারের বাড়ি নির্মাণ হবে। এজন্য নির্মাণ সামগ্রীর সরবরাহে যাতে সমস্যা না হয় ও অতিরিক্ত দাম না নেওয়া হয় সেজন্য নজরদারি করা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি ব্লকে নজরদারি কমিটি থাকছে। জেলার প্রতি এলাকায় সচেতনতা শিবিরকরা হচ্ছে।’’