কমিশন দেখছে, তাই চাষ জমিতেই ফ্লেক্স

সরকারি ভবন বা জমিতে ভোট প্রচারের ফ্লেক্স-ফেস্টুন লাগানো নিষিদ্ধ। অনেকে বাড়ির দেওয়ালেও রাজনৈতিক দলের ফেস্টুন লাগানোর অনুমতি দিচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে চাষের জমিতে খুঁটি পুঁতে হোর্ডিং লাগাতে হচ্ছে।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩৮
Share:

চাষের জমিতেই ভোট-প্রচার, ঘাটালে। — কৌশিক সাঁতরা।

কমিশনের বজ্র আঁটুনিতে ফাঁপড়ে শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই!

Advertisement

সরকারি ভবন বা জমিতে ভোট প্রচারের ফ্লেক্স-ফেস্টুন লাগানো নিষিদ্ধ। অনেকে বাড়ির দেওয়ালেও রাজনৈতিক দলের ফেস্টুন লাগানোর অনুমতি দিচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে চাষের জমিতে খুঁটি পুঁতে হোর্ডিং লাগাতে হচ্ছে। রাস্তার ধারেও অনেকে হোর্ডিং লাগিয়েছেন। সমস্যা সেখানেও। এখন বোরো ধান ও গ্রীষ্মকালীন সব্জি চাষের সময়। মাঠে খুঁটি পোঁতায় সমস্যায় পড়ছেন চাষিরা। ফাঁপড়ে রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাষির বক্তব্য, ‘‘এখন যা দিনকাল, কাউকে কিছু বলা যাবে না। প্রতিবাদ করলে তো সমস্যার সমাধানের থেকে ক্ষতিই বেশি হবে।’’ চাষ করতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না? তিনি বলছেন, ‘‘পতাকা, হোর্ডিং চাষের জায়গা থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিয়েই কাজ চালাচ্ছি।’’ ভোটের আগে হাতে সময় কম। ৪ এপ্রিল জেলার ৬টি আসনে ভোট। তার ঠিক এক সপ্তাহ পরেই ১১ এপ্রিল জেলার বাকি ১৩টি আসনে ভোটগ্রহণ। জেলার প্রায় সব জায়গাতেই দেওয়াল লিখন শেষের পথে। তবে সব জায়গায় দেওয়াল লিখনের কর্মী না মেলায় সমস্যা বাড়ছে। তাই প্রচারে চমকদার ফেস্টুনেই ভরসা রাখছে রাজনৈতিক দলগুলি। বহু টাকা ব্যয় করে ফ্লেক্স-ভিনাইল বোর্ড-ফেস্টুন তৈরির কাজও শেষ। এ বার এইসব প্রচার সামগ্রী লাগাতে গিয়ে সমস্যা পড়ছে শাসক থেকে বিরোধী সকলেই।

Advertisement

প্রতিদিন সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন ফ্লাইং স্কোয়াড এবং এমসিসি-র লোকেরা। কোনও সরকারি জমিতে ফ্লেক্স দেখলেই খুলে দিচ্ছেন। যা দেখে শাসকদলের এক নেতা বলেই ফেললেন, ‘‘গত লোকসভা ভোটের আগেও পূর্ত ও সেচ দফতরের জায়গায় ফ্লেক্স-ফেস্টুন লাগানো হয়েছিল। এ বার এত ক়ড়াকড়ি হবে জানলে প্রচারের পিছনে এত টাকা খরচ করতাম না।’’ আরেক নেতার বক্তব্য, ‘‘বিদ্যুৎ ও ফোনের খুঁটি থেকেও প্রচারের হোর্ডিং খুলে দেওয়া হচ্ছে। যে প্রার্থীর হোর্ডিং বা দলের পতাকা খুলে দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রার্থীর থেকেই যাবতীয় খরচ আদায় করছে কমিশন।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, আগে সব দলকে সরকারি জায়গার দেওয়াল লিখন মুছে দেওয়া ও প্রচার সামগ্রী সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের পরেও অনেক ফেস্টুন একই জায়গায় রয়ে গিয়েছে। তাই কমিশনের লোকেরা সেগুলি সরিয়ে দিচ্ছে। ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, ‘‘গোটা মহকুমায় এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার পোস্টার, ফেস্টুন খোলা হয়েছে। চল্লিশটির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানের দেওয়ালের লেখাও মুছে দেওয়া হয়েছে।’’ মহকুমাশাসক বলেন, “দেওয়াল লেখা মোছা থেকে প্রচার সামগ্রী খোলার যাবতীয় খরচই আমরা সংশ্লিষ্ট দলের প্রার্থীদের নিবার্চনী খরচের মধ্যে ধরে নিয়েছি।’’

ঘাটালের এক তৃণমূল নেতা প্রশা‌ন্ত রায় বলছেন, ‘‘এত টাকা খরচ করে ফ্লেক্স ছাপানো হয়েছে। আর আমরা কোনও ঝুঁকি না নিয়ে রাস্তার দু’ধারের জমিতে খুঁটি পুঁতেই ফ্লেক্স লাগিয়ে দিচ্ছি। তাতে পথচলতি মানুষ ও বাসযাত্রীদের চোখেও তা পড়ছে।’’ একই বক্তব্য সিপিএমের দাসপুর জোনাল কমিটির সদসল্য গুণধর বসুরও। বিজেপির জেলা সভাপতি ধীমান কোলের বক্তব্য, “গ্রামগঞ্জে দলীয় কর্মীদের সকলের প্রচারের নিয়ম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। তাই দলের পক্ষ থেকে কমিশনের নিয়ম মেনে প্রচার চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement