বুধবার পটাশপুরের টেপরপাড়া বাসস্ট্যান্ড বিজেপির অবরোধ তুলতে হেলমেট ও লাঠি হাতে এভাবেই দেখা গিয়েছিল সিভিকদের। নিজস্ব চিত্র
হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে বিজেপির পথ অবরোধে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে পটাশপুর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে সিভিক ভলান্টিয়ার্স দিয়ে লাঠি চার্জের অভিযোগে সরব হলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ডিজিপি এই বিষয়ে অভিযুক্ত পুলিশ সুপার ও পটাশপুর থানার ওসি সহ সিভিক ভলান্টিয়াদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করলে শুভেন্দুর আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়ায় সরগরম রাজ্য রাজনীতি।
ময়নার বাকচায় বিজেপির বুথ সভাপতি বিজয় ভুঁইয়ার খুনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য বিজেপি বুধবার ১২ ঘণ্টা ময়না বন্ধের সঙ্গে জেলা জুড়ে ১০০ জায়গায় পথ অবরোধের ডাক দেয়। সেই মতো বুধবার সকালে পটাশপুরের টেপরপাড়া বাসস্ট্যান্ডে এগরা-বাজকুল রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। গোলমালের আশঙ্কায় এলাকায় আগে থেকে সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছিল। স্থানীয় সূত্রের খবর, পথ অবরোধের সময় সিভিক ভলান্টিয়ারেরা প্রথমে দিকে পুলিশের সঙ্গে অবরোধ তুলতে হস্তক্ষেপ করেননি। অভিযোগ, পরে পটাশপুর থানার এক অফিসারের নেতৃত্বে জলপাই পোশাকে লাঠিধারী সিভিক ভলান্টিয়ারদের স্পেশাল ফোর্স অবরোধ তুলতে যায়। সেই সময় অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পরে পটাশপুর থানার ওসি রাজু কুণ্ডুর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী অবরোধরোধকারীদের উপর লাঠিচার্জ শুরু করে বলে অভিযোগ। ওই সময়ে পুলিশের সঙ্গে জলপাই পোশাকে সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের স্পেশাল ফোর্স মাথায় হেলমেট ও হাতে ঢাল এবং লাঠি হাতে লাঠিচার্জ শুরু করে বলে দাবি বিজেপির। নীল-সবুজ পোশাকেও একদল সিভিক ভলান্টিয়ারকে লাঠি হাতে পুলিশের সঙ্গে দেখা যায়। লাঠিচার্জের ঘটনায় এক পথচারী-সহ সাতজন বিজেপি কর্মী আহত হন।
এই ঘটনার ছবি প্রকাশ্যে আসতেই হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে বলে বুধবার কোলাঘাটে একটি সাংবাদিক বৈঠকে জেলা পুলিশ সুপার ও পটাশপুর থানার ওসির বিরুদ্ধে সুর চড়ান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন জেলা পুলিশ সুপার ও পটাশপুর থানার ওসি। এই ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যবহার করা যাবে না। আইজি ওয়েলফেয়ারের এক নির্দেশিকায় সিভিক ভলান্টিয়ার্সরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সহযোগিতা করা-সহ একাধিক বিধি দেওয়া রয়েছে। ওসি রাজু কুণ্ডুর সঙ্গে পাঁচ ছজন সিভিক ভলান্টিয়ারদের চিহ্নিত করেছি।’’ তিনি জানান, সিভিকের পোশাক ও মাথায় হেলমেট পরে মোহনলাল শী ও কৃষ্ণগোপাল দাসদের নির্মম ভাবে পিটিয়েছে। পুলিশ সুপার অমরনাথ কে এবং ওসি সহ সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ডিজিপিকে টুইট করবেন বলে দাবি করেন শুভেন্দুও। বৃহস্পতিবার ময়নায় বিজেপির মিছিল কর্মসূচির পরেও শুভেন্দু বলেন, "নীচুতলার পুলিশ দায়ী নয়। এখন কয়েকজন সিভিককে কাজে লাগানো হচ্ছে। পটাশপুর ধরেছি। এরপর ময়না ধরব। কী করে সাফ করতে হয় আমি করে দেখাব।’’ তিনি আদালতে এই নিয়ে আইনি লড়াইয়েরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, জেলার প্রতিটি থানায় পুলিশ কর্মীর সঙ্কটে এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে ২০ জনের স্পেশাল সিভিক ভলান্টিয়ার বাহিনী তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও থানায় কম্পিউটার থেকে কেস ডাইরি লেখার কাজে ১০ থেকে ১৫ জন নিযুক্ত থাকেন। জলপাই পোশাকে স্পেশাল সিভিক ভলান্টিয়ার বাহিনী ওসি সহ অন্যান্য পুলিশ অফিসারের নির্দেশে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরাসরি কাজে লাগানো হয়। হাই কোর্টের নির্দেশের পরেও সেই কাজ সমানে চলছে বলে দাবি বিজেপির।
তবে এ ব্যাপারে এগরা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক মহম্মদ বৈদুজামান বলেন, ‘‘পথ অবরোধের জেরে রাস্তার যানজট এড়াতে ট্রাফিকের কাজ করছিল সিভিক ভলান্টিয়াররা। পথ অবরোধ তুলতে লাঠি চার্জ করেননি তাঁরা।’’