রাস্তার কাজ করছে খুদে শ্রমিকেরা। গুড়িয়া মোড়ের কাছে। নিজস্ব চিত্র।
বেহাল রাজ্য সড়কের মেরামতিতে পিচের আস্তরণ দেওয়ার কাজ চলছে জোর কদমে। গড়াচ্ছে রোলার। আর তার পিছনেই পিচের আস্তরণের উপর হাতে করে সাদা পাউডার ছড়াচ্ছে
দুই খুদে।
যে বয়সে ওই খুদেদের হাতে বই ধরার কথা, সেই হাতেই রাস্তায় রাসায়নিক মেশানো সাদা পাউডার ছড়াচ্ছে তারা। খাস সরকারি কাছে শিশু শ্রমিকের ব্যবহারে বিতর্ক ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, শিশু শ্রমিক প্রতিরোধ আইনকে এভাবে বুড়ো আঙুল দেখানোয় ঠিকাদার সংস্থা এবং পূর্ত দফতরের ভূমিকায়।
তমলুক শহর থেকে নিমতৌড়ি বাজার, সাউতানচক হয়ে ঠেকুয়া বাজারগামী রাজ্য সড়কের বেহাল অংশ মেরামতির জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করেছে পূর্ত দফতর। ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা রাস্তায় পিচের আস্তরণ দেওয়ার পর রোলার দিয়ে তা মসৃন করছেন। কিন্তু শনিবার সকালে সেখানেই কাজে যেভাবে শিশু শ্রমিক ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে, তাতে আপত্তি উঠেছে। কারণ, শিশুশ্রম আইন অনুযায়ী এই কাজ শুধু নিষিদ্ধ নয়, শাস্তি যোগ্য অপরাধ। এ দিন গুড়িয়ার মোড়ের কাছে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ওই শিশু কাজ করছে। সাংবাদিকেরা ছবি তোলার জন্য তাঁদের কাছে যেতেই আশেপাশে থাকা ঠিকাদার সংস্থার কর্মী সেখান থেকে পালিয়ে যান।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, খোদ পূর্ত দফতরের নিযুক্ত একটি ঠিকাদার সংস্থা রাস্তা মেরামতির কাজে এভাবে শিশু শ্রমিক ব্যবহার করছে কীভাবে। পূর্ত দফতরের কোনও নজরদারি
নেই কেন?
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিমতৌড়ি তমলুক উন্নয়ন সমিতির ‘জুভেনাইল জাস্টিস হোমে’র চাইল্ড ওয়েলফেয়ার অফিসার দেবশ্রী ত্রিপাঠী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘শিশুশ্রম আইন অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে-মেয়েদের কোনও ধরনের ভারী কাজে লাগানো যাবে না। এটা আইনত অপরাধ। অনেকেই সেই নিয়ম ভঙ্গ করেন। কিন্তু সরকারি কাজে নিয়ম ভাঙা হচ্ছে কেন? এটা শাস্তি যোগ্য অপরাধ। ঠিকাদার সংস্থার দোষ প্রমাণ হলে জেল ও জরিমানা হতে পারে।’’ শিশুদের যাতে কাজে না পাঠানো হয়, তা নিয়ে ওই শিশুর পরিবারদেরও সচেতন করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন দেবশ্রী। জেলা পূর্ত দফতর অবশ্য বিষয়টি জানা নেই বলে দায় এড়িয়েছে। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের নজরে নেই। তবে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’
অভিযোগের তির উঠেছে ঠিকাদার সংস্থার দিকেও। এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুর ‘ডিস্ট্রিক্ট কনট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশনে’র জেলা সম্পাদক মহেশ্বর সামন্ত বলেন, ‘‘এই সব কাজে শিশুদের নিযুক্ত করা যায় না। যদি কেউ করে থাকেন, তা ঠিক হয়নি। সংগঠনের তরফে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে সতর্ক করা হবে।’’